অসময়ে মাচায় তরমুজ চাষে ইলিয়াসের সাফল্য 
দূর থেকে মনে হতে পারে মাচায় লাউ-কুমড়া ঝুলছে। কিন্তু কাছে গেলে অবাক হবেন আপনি। মাচায় চাষ করা হয়েছে তরমুজ। যদিও এই এলাকায় এ সময় তরমুজ চাষ হয় না। তবে সেই অসাধ্য সাধন করেছেন ইলিয়াস আলী। ২৫ শতাংশ জমিতে ব্লাক ক্যান্ডি, ইয়োলো মাস্টার ও মেলন জাতের তরমুজ চাষ করে রীতিমতো এলাকায় সাড়া ফেলেছেন এই কৃষক। 

নাটোর জেলার নলডাঙ্গা উপজেলার দিয়ারপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ইলিয়াস আলী। তিনি এখন স্থানীয় চাষীদের কাছে অনুপ্রেরণার আরেক নাম। 


তরমুজ মৌসুমী ফল। সাধারণত ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত বাজারে পাওয়া যায়। কিন্তু অসময়ে তরমুজ চাষ করে ভালো ফলন পাওয়ায়  আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন ইলিয়াস। এলাকার মো. সোলায়মান আলীর কাছ থেকে জমি লিজ নিয়ে ২৫ শতক জমিতে মাচায় তরমুজ চাষ করেছেন তিনি। স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শে একই জমিতে তিন জাতের তরমুজ চাষ করেছেন। প্রায় ৫৫ দিনের মধ্যেই তরমুজের ফুল ও ফল আসে। বর্তমানে প্রায় ৫৫০টি তরমুজ রয়েছে তার মাচায়। এর মধ্যে কোনোটার ওজন ১ কেজি থেকে দেড় কেজি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এক সপ্তাহ পরেই তিনি তরমুজ সংগ্রহ করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করবেন বলে জানান তিনি। 

 

ইলিয়াস আলী প্রাকৃতিক জৈব সার জমিতে ব্যবহার করেছেন। পোকামাকড় নিধনের জন্য তিনি ফেরোমন ফাঁদ ও ইয়োলো কালার ট্যাপ পদ্ধতি অনুসরণ করেন। এ সবই তিনি কৃষি অফিসের পরামর্শে করেছেন। এতে এ পর্যন্ত তার খরচ হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি তরমুজ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা। খুচরা ১০০ টাকা। 


ইলিয়াস আলী বলেন, ‘ধানসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করছি। কিন্তু আমি বিকল্প আয়ের সন্ধান করছিলাম। এ সময় মাচায় তরমুজ চাষ সম্পর্কে কৃষি অফিস থেকে জানতে পারি। এরপর এ বিষয়ে সামান্য প্রশিক্ষণ নিয়ে অসময়ে তরমুজ চাষ করি। আশা করছি সব খরচ বাদে ৩০ হাজার টাকা লাভ থাকবে।’

স্থানীয় কৃষক সোলায়মান আলী বলেন, ‘আমি ইলিয়াস ভাইয়ের তরমুজ চাষ দেখেছি। তিনি তরমুজ চাষে প্রাকৃতিক পদ্ধতি অনুসরণ করেছেন জন্য খরচও অনেক কম হয়েছে। তাই তার অনেক লাভ হবে। সরকারি সহযোগিতা ও পরামর্শ পেলে আগামী মৌসুমে এই পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ আমিও করবো। শুধু আমি না এলাকায় এমন আরও অনেক কৃষক এভাবে তরমুজ চাষ করবে।’

নলডাঙ্গা উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার কৃষিবিদ মো. কিশোয়ার হোসেন বলেন, ‘মোটিভেশনের মাধ্যমেই কৃষক ইলিয়াস আলী অসময়ে মাচায় তরমুজ চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন। আশা করছি আগামী বছর অফ সিজনে উপজেলাজুড়ে এই জাতের তরমুজ চাষ বৃদ্ধি পাবে।’