অপরাধীদের অভয়ারণ্য জঙ্গল ছলিমপুরকে নিয়ে সরকার একটি মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। যেটুকু পাহাড় কাটা হয়েছে সেটুকুতেই  মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। বাকি পাহাড়ের পরিবেশ প্রতিবেশ অক্ষুন্ন রাখা হবে। আগামী এক মাসের মধ্যে বনজ ফলজ দুই লাখ গাছ লাগানো হবে এখানে।

জঙ্গল ছলিমপুরে আন্তর্জাতিকমানের হাসপাতাল, তথ্য কেন্দ্র, কারাগার ও সাফারি পার্কসহ সরকারের নানান স্থাপনা হবে।

 

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, এখানে আন্তর্জাতিকমানের হাসপাতাল, তথ্য কেন্দ্র, কারাগার ও সাফারি পার্কসহ সরকারের নানান স্থাপনা বাস্তবায়ন করা হবে। তাছাড়া এখানে যারা ভূমি দখল করে ব্যবসা করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে সরকার। যারা পাহাড় কেটে অবৈধভাবে বসবাস করছে তাদের আগামী এক মাসের মধ্যে সরিয়ে নেওয়া হবে। প্রকৃতপক্ষ যারা ভূমিহীন ও গরীব তাদেরকে খুব দ্রুত সরিয়ে নিয়ে পুর্নবাসন করবে সরকার।

পরিবেশ এখানে চারটি মামলা করেছেন। এখানে মসজিদ মাদরাসা মন্দির প্যাগোড়া নির্মাণ করা হয়েছে। সবগুলো সরকারি জমি। দখলের উদ্দেশ্যে এসব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করা হয়েছে। সেগুলো সরকারের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

এখানে ৫টি মৌজায় মোট খাস জমির পরিমাণ প্রায় ২ হাজার ৮০০ একর। ভূমিদস্যুরা নব্বই দশক থেকে এখানে পাহাড় কেটে পরিবেশ বিপন্ন করে জঙ্গল ছলিমপুরকে অবৈধ বসবাসকারী অপরাধীদের স্বর্গরাজ্য হিসেবে গড়ে তুলেছে।

অবৈধভাবে পাহাড় কেটে তৈরি করা ঝুকিপূর্ণ প্লটগুলো দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অপকর্ম করে আসা সন্ত্রাসীদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে । শতাংশ প্রতি ২০ হাজার টাকা থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।  

জঙ্গল ছলিমপুরের খাস পাহাড়গুলো নির্বিচারে কেটে বিক্রি করার ফলে সন্ত্রাসীরা একদিকে কোটি কোটি আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে অন্যদিকে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে। গত তিন চার বছরে পাহাড় ধসে এখানে ৫ জন মারা গেছেন। এই পর্যন্ত  জঙ্গল ছলিমপুরে নির্বিচারে পাহাড় কাটা হয়েছে প্রায় ৪০০ একর।

জেলা পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক বলেন, অধিকাংশ জায়গাই সরকারি খাস জমি। পাহাড়খেকো ইয়াসিন ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা বেশ অনেকদিন যাবৎ পাহাড় কেটে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করেছে।

যারা এখানে এসব স্থাপনা নির্মাণ করে ব্যবসা করছে তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে কুখ্যাত পাহাড়খেকো সন্ত্রাসী ইয়াসিনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সে জেলহাজতে আছে। তার সাঙ্গপাঙ্গ যারা আছে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। প্রত্যেককেই আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে এবং পাহাড় কেটে যে অপরাধ তারা করেছে এবং অভয়ারণ্য গড়ে তুলেছে, এজন্য তাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পুলিশ সুপার বলেন, এখানে বিভিন্ন সরকারি দফতর স্থাপিত হবে। এই এলাকাটি চমৎকার একটি এলাকায় পরিণত হবে। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা থাকবে। পুলিশ ও জেলা প্রশাসন একযোগে কাজ করছে। ইনশাআল্লাহ আমরা এটি বাস্তবায়ন করে ছাড়বো।

তিনি বলেন, এখানে কাজের ব্যপ্তি অনেক বেশি। অনেক এলাকা জুড়ে অবৈধ স্থাপনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এসব জায়গায় কাজ করতে হলে প্রত্যেক বাহিনীর সহযোগিতা লাগবে। এখানে জেলা পুলিশের ৬০ সদস্য ও র্যা ব, আনসারসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা এসেছেন।

বর্তমানে নিরাপত্তা চৌকিতে ৮ জন সদস্য আছে। এর বাইরে এখানে একটি অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প ও একটি র্যা বের ক্যাম্পের জন্য জায়গা নির্ধারণ করেছি। জেলা প্রশাসন চূড়ান্তভাবে জায়গা দিলে আমরা এক সপ্তাহের মধ্যে পুলিশ ক্যাম্প বিশালাকারে স্থাপন করবো।

নাইট সাফারি পার্ক
প্রায় ৪০ একর জায়গা জুড়ে গড়ে তোলা হবে নাইট সাফারি। সিঙ্গাপুরের মান্দাই ওয়াইল্ড লাইফ রিজার্ভ নাইট সাফারির আদলে এটি করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। যা হবে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম নাইট সাফারি পার্ক।
 সিঙ্গাপুরের মতো উন্মুক্ত বন্যপ্রাণী রাতে দেখার ব্যবস্থা করা হবে। 

উল্লেখ্য সাফারী পার্ক, হাসপাতাল ও জেলখানার ছবি গুগল থেকে নেওয়া হয়েছে।