চট্টগ্রামের চোরা কারবারী আবু আহম্মদ(সোনা আবু)কে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। ঋণের নামে ২শ’ ৪ কোটি টাকা পাচারের মামলায় জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে বিচারপতি মো: নজরুল ইসলাম তালুকদার এবং বিচারপতি খিজির হায়াতের ডিভিশন বেঞ্চ এ নির্দেশ দেন। হাইকোর্ট তার নির্দেশনায় আবু আহমেদের বিদেশ গমণেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন।
গতকাল মঙ্গলবার এ তথ্য জানিয়েছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিনউদ্দিন মানিক। তিনি বলেন, সিআইডি’র মামলার আসামি আবু আহমেদ বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করলেও ৯ মাস ধরে নানা অজুহাতে সময় ক্ষেপণ করতে থাকেন। এর ফলে তার বিরুদ্ধে পুনরায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। কিন্তু সেই তথ্য গোপন করে আবারও তিনি হাইকোর্টে আগাম জামিন প্রার্থনা করেন। তারপক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ূন। শুনানি শেষে আবেদন নামঞ্জুর করে আবু আহমেদকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে তিনি যেন দেশ ছাড়তে না পারেন, সেই লক্ষ্যে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে ইমিগ্রেশনকে।


প্রসঙ্গত: ব্যবসায়ী আবু আহাম্মদ চট্টগ্রাম ফটিকছড়ির বাসিন্দা। ২০২০ সালের ১৮ মার্চ তিনিসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে কোতয়ালি থানায় মামলা করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত সংস্থা-সিআইডি। এজাহারে উল্লেখ করা হয়, আসামিরা পরষ্পর যোগসাজশে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কয়েকটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ১২ বছর ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে স্বর্ণ চোরাচালান, চোরাই ও অন্যান্য দ্রব্যের অবৈধ ব্যবসা করছেন। অবৈধ ব্যবসা ও হুন্ডির মাধ্যমে পাচারকৃত ২০৪ কোটি টাকায় তারা গাড়ি, বাড়ি, মার্কেটসহ বিপুল অবৈধ সম্পদ অর্জন করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বিএফআইইউ থেকে পাওয়া হিসাব বিবরণী, কাগজপত্র পর্যালোচনা, লেনদেনের ধরণ এবং আসামির স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ পর্যালোচনায় অভিযোগ সত্য মর্মে প্রতীয়মান হওয়ায় মামলা করে সিআইডি।

এ মামলায় গত ৭ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি মো: নজরুল ইসলাম তালুকদারের নেতৃত্বে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ থেকে ৩ সপ্তাহের অন্তর্বর্তীকালিন জামিন নেন আবু আহাম্মদ। মেয়াদ শেষে তাকে চট্টগ্রাম সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়। এ প্রেক্ষিতে ওইবছর ২২ জানুয়ারি আত্মসমর্পণ করে বিচারিক আদালতে জামিন প্রার্থনা করেন। পরবর্তীতে তিনি চাতুর্যের আশ্রয় নিয়ে নানা অজুহাতে জামিন আবেদনের শুনানি পেছাতে থাকেন। তার জামিন আবেদন পেয়ে চট্টগ্রামের সিনিয়র স্পেশাল জজ ইসমাইল হোসেন নথি তলব করে ৫ মে শুনানির জন্য তারিখ ধার্য করেন । কিন্তু চট্টগ্রামের চীফ মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে নথি না আসায় জামিন শুনানি হয়নি। ১৩ জুলাই আবার শুনানির দিন ঠিক হলেও নথি না আসায় সেদিনও শুনানি হয়নি। সেদিন আদালত ৩১ আগস্টের মধ্যে নথি জমা দিয়ে ৫ সেপ্টেম্বর শুনানির দিন ধার্য রাখেন। এভাবে আরও কয়েকবার শুনানির জন্য সময় প্রার্থনা করেন আবু আহম্মদের আইনজীবী। এসব আবেদনও গ্রহণ করেন আদালত। কিন্তু গত ১৩ নভেম্বর পুনরায় সময় প্রার্থনা করলে তা নামঞ্জুর করে বিশেষ জজ আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। সেই তথ্য গোপন করে তিনি হাইকোর্টে আবারও জামিন আবেদন করেন। হাইকোর্ট বিষয়টি ধরে ফেলেন। পরবর্তীতে তাকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন।