স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, আগামী ৩০ মার্চ থেকে দেশের ১০টি জেলা ও ২০টি উপজেলা হাসপাতালে সরকারি চিকিৎসকদের কাছ থেকে বিকেল ৩টা থেকে সন্ধা ৬টা পর্যন্ত নির্ধারিত ফি দিয়ে সাধারণ মানুষ চিকিৎসা নিতে পারবেন। প্রাথমিকভাবে পরীক্ষামূলক এ সুবিধায় বিভিন্ন স্বাস্থ্য পরীক্ষাও করা যাবে।

সোমবার (২৭ মার্চ) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাক্টিস নীতিমালা-২০২৩ চূড়ান্তকরণ সংক্রান্ত এক সভায় সভাপতির বক্তব্যে এ কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, 'সরকারি হাসপাতালে সকাল ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত চিকিৎসকেরা বিনামূল্যে রোগী দেখেন। এতে বিকেলে বহু মানুষ চিকিৎসা নিতে না পেরে বাইরে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে বেশি ফি দিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেন।'

নীতিমালা অনুযায়ী, মাইনর সার্জারির জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা ৮০০ টাকা এবং নার্স ও অন্যান্য সহায়কেরা ৪০০ টাকা করে পাবেন।

সার্জারির জন্য সেবা চার্জ ৩০০ টাকা নির্ধারিত করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

সিজার পদ্ধতিতে ডেলিভারি ও একই ধরনের সার্জারির ক্ষেত্রে সরকারি হাসপাতালগুলোতে বিকেলবেলা রোগীকে ২,৫০০ টাকা খরচ করতে হবে।

এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ শল্য চিকিৎসক ১,৫০০ টাকা এবং নার্সেরা ৫০০ টাকা করে পাবেন। সিজারের জন্য সেবা চার্জ ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এর বাইরে মেডিকেল সহকারীরা রোগনির্ণয় ও ক্লিনিক্যাল টেস্টের খরচের ৫০ শতাংশ পাবেন এবং ৫০ শতাংশ রাখা হবে সেবা চার্জ হিসেবে। রেডিওলজি ও ইমেজিং সেবার জন্য মেডিকেল সহকারীকে ৩০ শতাংশ অর্থ দেওয়া হবে এবং সেবা চার্জ হিসেবে ৭০ শতাংশ রাখা হবে।

দেশের সব হাসপাতালে আগামী ৩১ আগস্টের মধ্যে এ ধরনের ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাক্টিস চালু করা হবে।

বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবায় চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টদের সম্মানি ফি নির্ধারণ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, রোগীরা ৫০০ টাকা ফিয়ের বিনিময়ে অধ্যাপকদের কাছে পরামর্শের জন্য যেতে পারবেন। এছাড়া সহযোগী অধ্যাপক বা সিনিয়র কনসালটেন্টদেরকে ৪০০ টাকা, সহকারী অধ্যাপক বা জুনিয়র কনসালটেন্ট বা সমপর্যায়ের চিকিৎসকগণকে ৩০০ টাকা এবং এমবিবিএস ডিগ্রিধারীদেরকে ২০০ টাকা ফি দিয়ে চিকিৎসা সেবা নিতে পারবেন। এর পাশাপাশি হাসপাতালে রোগীদের বিভিন্ন পরীক্ষার জন্যও বৈকালিক ফি নির্ধারণ করে দেওয়ার কথা জানান তিনি।

সরকারি চিকিৎসকদের সপ্তাহে কয়দিন করে ডিউটি থাকবে সে প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, একজন চিকিৎসককে সপ্তাহে মাত্র দুই দিন অতিরিক্ত তিন ঘণ্টা করে সেবা দিতে হবে। তবে, এ সেবা যাতে মানুষ সপ্তাহে অন্তত ছয় দিন পান, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।

চিকিৎসকেরা অতিরিক্ত তিন ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করবেন কি না এ বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারি সেবাদানের জন্য চিকিৎসকসহ সকল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রয়োজনে ২৪ ঘণ্টা সেবা দেওয়ার নিয়ম আছে বলে জানান স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব ড. মুঃ আনোয়ার হোসেন হাওলাদার। এক্ষেত্রে সকল পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী সরকারের নির্দেশনা মেনে চলতে বাধ্য থাকবেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

সভায় মন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা বৃদ্ধির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যসেবার মান বৃদ্ধির বিভিন্ন উদ্যোগের অংশ হিসেবে এ বৈকালিক ইনস্টিউশনাল প্র্যাক্টিস আপাতত ছোট আকারে শুরু করা হচ্ছে। এ কাজের সাফল্য দেখে খুব দ্রুতই দেশের সকল জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা চালু করা হবে।

সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মোঃ আজিজুর রহমান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মোঃ টিটো মিঞা, বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ)'র মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিব) সভাপতি অধ্যাপক ডা. জামাল উদ্দিন চৌধুরী ও মহাসচিব অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান মিলন, এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ।