চট্টগ্রাম নগরের পাহাড়তলী থানার মুরগি ফার্ম আলম তারারপুকুর পাড় এলাকা থেকে আবিদা সুলতানা আয়নী (১০) নামে এক শিশু নিখোঁজ হয় গত ২১ মার্চ। নিখোঁজের আটদিন পেরিয়ে গেলেও কোন কূলকিনারা করতে পারছিল না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
অবশেষে আয়নীর মরদেহ ও হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রাম মেট্রো। এ ঘটনায় মোহাম্মদ রুবেল নামের স্থানীয় এক তরকারি বিক্রেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
রুবেলকে জিজ্ঞাসাবাদে থেকেই হত্যার মোটিভ ও মরদেহ উদ্ধার করে পিবিআই। শিশু আয়নীকে ধর্ষণের পরে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন মো. রুবেল।

বুধবার (২৯ মার্চ) দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে হত্যার বর্ণনা দেন পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর প্রধান পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা।

তিনি বলেন, শিশু আয়নীকে নিয়ে মা বিবি ফাতেমা তিন মাস পূর্বে নগরের পাহাড়তলী থানার মুরগী ফার্ম এলাকায় বসবাস শুরু করেন। আয়নীর পিতার সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের পরে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে চলে আসেন। আয়নী স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী। মা গার্মেন্টসে চাকুরি করার সময় নানীর সঙ্গে থাকতেন আয়নী। তরকারি বিক্রির সুবাদে বিবি খাদিজার সঙ্গে রুবেলের পূর্ব পরিচয় ছিল।

তিন মাস পূর্বে তরকারি বিক্রয়কালে একটি বিড়ালছানা ধরতে গিয়ে আয়নী রিকশার সঙ্গে ধাক্কা লাগে জানিয়ে পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা বলেন, এ সময় আয়নীর সঙ্গে পরিচয় রুবেলের। আয়নী রুবেলের কাছে বিড়ালছানা আবদার করেছিল। রুবেলও তার বোনের বাসা থেকে বিড়াল এনে দিবে অঙ্গীকার করেছিল। এরপর রুবেলের সঙ্গে আয়নীর তিন মাসে আর কোনো দেখা হয়নি। গত ২০ মার্চ রুবেলের বাসায় আয়নী ও তার এক বান্ধবীকে সঙ্গে নিয়ে বিড়ালছানা খুঁজতে যায়। তখন রুবেলের সঙ্গে দেখা হয়নি। পরবর্তীতে রুবেলের সঙ্গে সকাল ১১টার দিকে আয়নীর বাসার নিচে কথা হয়। রুবেল বিকেলে বিড়ালছানা নেওয়ার জন্য আসতে বলে। একদিন রুবেলের দেখা না পেয়ে চলে আসে।

তিনি আরও বলেন, গত ২১ মার্চ সকালে রুবেলকে স্কুলের রাস্তার সামনে বিড়ালছানার কথা জিজ্ঞেস করে, তখন রুবেল আয়নীকে স্কুল শেষে ক্লাবের পাশে নিদিষ্ট স্থানে আসতে বলে। সে মোতাবেক বিকেলে সাড়ে চারটার দিকে আয়নী স্কুল থেকে বাসায় যায়। স্কুল ড্রেস চেঞ্জ করে পুনরায় হিজাব পরে বের হয়ে রুবেলের কথা মতো বিড়ালছানা আনতে যায়। রুবেল তখন বোরকা পরিহিত আয়নীকে চিনতে পারেনি। আয়নী নিজ থেকে রুলেবকে ডাকে, তখন রুবেল তার ফুফুর বিল্ডিংয়ের চতুর্থ তলায় খালি বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে আয়নীকে রুবেল ধর্ষণ করে। পরে আয়নী সেখানে দরজা থেকে বের হয়ে যায়। ধর্ষণের কথা কাউকে জানাবে না বলে রুবেলকে জানায়। কিন্তু রুবেল আয়নীকে ডেকে নিয়ে ধর্ষণের বিষয়টি ধামাচাপা দিতে গলাটিপে ও বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করে।


বুধবার ভোরে ডোবা থেকে আয়নীর মরদেহটি উদ্ধার করা হয়েছে। আয়নীর কালো একটি গেঞ্জি, এক জোগান স্যান্ডেল, একটি কালো পায়জাম ও একটি গাড় নেভী ব্লু-রংয়ের হিজাব উদ্ধার করা হয়েছে।

এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, আয়নীকে ধর্ষণের ঘটনা জানাজানি হওয়ার আশঙ্কায় আয়নীকে গলাটিপে হত্যা করেন রুবেল। কয়েকদিন আগে ওই এলাকায় একটি বলাৎকারের ঘটনা জানাজানি হয়। এটিও এরকমভাবেই জানাজানি হয়ে যাবে এ আশঙ্কায় রুবেল শিশু আয়নীকে হত্যা করে।

বুধবার বিকেলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল দেবের আদালতে রুবেলকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। আদালতে রুবেল হত্যার ঘটনায় দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে।

গ্রেফতার মো. রুবেল, নগরের পাহাড়তলী থানার কাজিরদিঘী ডা. নজির বাড়ির মৃত আব্দুল নূরের ছেলে। তিনি পেশায় তরকারি বিক্রেতা ও দুই সন্তানের জনক।

এর আগে মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক শরমিন জাহানের আদালতে বিড়ালছানা দেওয়ার লোভ দেখিয়ে আবিদা সুলতানা আয়নীকে অপহরণ করার অভিযোগে শিশুটির মা বিবি ফাতেমা বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলাটি আদালত পাহাড়তলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) এজাহার হিসেবে নিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন।