আল কাদির ট্রাস্ট মামলায় পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে দেশটিতে বিক্ষোভ ও সহিংসতা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। এতে এখন পর্যন্ত ৮ জন নিহত এবং ২৯০ জনের মতো আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে গণগ্রেপ্তার শুরু করেছে পুলিশ। এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৯০০ জনেরও বেশি বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়েছে।


বৃহস্পতিবার পৃথক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বিবিসি ও ডন।

 

ইমরান খানকে ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরোর ১৪ দিনের রিমান্ড আবেদনের প্রেক্ষিতে ৮ দিন মঞ্জুর করেছে আদালত। এতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে পিটিআই কর্মীদের সংঘাত আরও তীব্র হয়েছে। বুধবার (১০ মে) চলমান বিক্ষোভের দ্বিতীয় দিনে পাকিস্তান জুড়ে কমপক্ষে ৮ জন নিহত হয়েছে।

পুলিশ ও পিটিআই সমর্থকদের দিনভর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে পুলিশ স্টেশন, রেডিও পাকিস্তানসহ বেশ কয়েকটি সরকারি স্থাপনায় আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। পিটিআই নেতারা অভিযোগ করে বলেছে, শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে পুলিশ গুলি ছুড়ছে। এতে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হচ্ছে। ক্রমবর্ধমান এই সংঘাতময় পরিস্থিতি মোকাবিলায় পাঞ্জাব, খাইবার পাখতুন খোয়া ও ইসলামাবাদে সামরিক বাহিনী তলব করা হয়েছে। এরই মধ্যে ইসলামাবাদ, পাঞ্জাব ও পেশোয়ারে রাস্তায় মোতায়েন সেনাসদস্যদের দেখা গেছে।

এদিকে গভীর রাতে পিটিআইয়ের কেন্দ্রীয় মহাসচিব আসাদ ওমরকে গ্রেপ্তারের কয়েক ঘণ্টা পর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ফাওয়াদ চৌধুরীকেও গ্রেপ্তার করা হয়। এদিকে বুধবার শাহ মেহমুদ কোরেশির আটক নিয়ে নানা নাটকীয়তা দেখা দেয়। শুরুতে গণমাধ্যমগুলো তার গ্রেপ্তারের সংবাদ দিলেও পিটিআই তা অস্বীকার করে। এক টুইটবার্তায় কুরেশির আটকের বিষয়টি এবার খোদ পিটিআই-ই জানিয়েছে। দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাকে গ্রেপ্তারের পর অজানা স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

বুধবার পাকিস্তানের আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) যে বিবৃতি দিয়েছে, তাকে প্রতিশোধ পরায়ণ দূঃখজনক আখ্যান হিসেবে অভিহিত করেছে পিটিআই।

আইএসপিআর বিবৃতিতে বলেছিল, ৯ মে সেনা সম্পতি ও স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলার ঘটনায় দিনটিকে ‘কালো অধ্যায়’ হিসেবে স্মরণ করা হবে। রাজনৈতিক পোশাক পরা এই দল ৭৫ বছরে শত্রুরা যা করতে পারেনি, তারা তা করেছে। সেনাবাহিনী ধৈর্য ও সংযম দেখিয়েছে এবং দেশের বৃহত্তর স্বার্থে তার সুনামকে পাত্তা না দিয়ে চরম সহনশীলতা প্রদর্শন করেছে।

বিবৃতিতে ইমরানের গ্রেপ্তারের ঘটনা নিয়েও মন্তব্য করেছিল আইএসপিআর। সামরিক বাহিনীর এই মিডিয়া উইং দাবি করেছে, ইমরান খানকে আইন অনুসারেই ইসলামাবাদ হাইকোর্ট থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ইমরানের গ্রেপ্তারের দিনই সেনাবাহিনীর স্থাপনায় হামলার ঘটনা ঘটে। লাহোর সেনানিবাসে কর্পস কমান্ডারের বাড়িতে হামলা চালিয়ে বিক্ষোভকারীরা আসবাবপত্রে অগ্নিসংযোগ করে। এমনকি রাওয়াল পিন্ডিতে সেনা হেডকোয়ার্টারেও ভাঙচুর চালানো হয়।

এদিকে এক বিক্ষোভকারী বিবিসিকে বলেন, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমরা প্রতিবাদ চালিয়ে যাব বা যতক্ষণ না তারা ইমরান খানকে মুক্ত করে। অন্যথায় আমরা সারাদেশ অচল করে দেব।