চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানার চৌধুরীহাট এলাকায় এক হিন্দু পরিবারের শ্মশান ও পুকুরসহ প্রায় ৮৪ শতক দখলের চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেছেন পরিবারের সদস্যরা।

জুয়েল সরকার ও রিয়েল সরকার দুই ভাই সোমবার দুপুরে কাঠফাটা রোদে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে সাদা কাপড় পরে শ্মশান রক্ষার দাবিতে  মানববন্ধন করে।


দুই ভাই অভিযোগ করেন, আগামী ১০ জুনের মধ্যে ওই জমি থেকে তাদের বাবার শ্মশান সরিয়ে নিতে জোর পূর্বক মুচলেকা নেয়া হয়েছে। পরিবারের সদস্যরা সাদা কাপড় পরে দ্বারে দ্বারে ঘুরছে পূর্ব পুরুষের শ্মশান ও জমি রক্ষার জন্য। মানববন্ধন থেকে তারা পরিবারের নিরাপত্তা ও সম্পত্তি ফিরিয়ে দেয়ার দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

জুয়েল সরকার বলেন, ৮৪ শতক জমি আমার বাবা ডা. আশীষ বরণ সরকারের নামে। এ বিষয়ে আদালতের আদেশও আমাদের কাছে আছে। আমাদের বাবা অসুস্থ হয়ে গত ১৬ মে মৃত্যুবরণ করেন। ধর্মীয় রীতি অনুসরণ করে পূর্বপুরুষের শ্মশানে বাবাকে দাহ করি। কিন্তু গত ২৬ মে ধর্মীয় রীতি অনুসারে শ্মশানে ধর্মীয়কার্য করতে গেলে আমাদের বাধা দেয়া হয়। পার্শ্ববর্তী কোরিয়ান এনজিও সংস্থা এপিএবি’র লোকজন বাধা দিয়ে জানায় তারা হাটহাজারীর সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছ থেকে ওই সম্পত্তি লিজ নিয়েছে। সেখানে তারা সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেয় এবং আমাদের চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। আমরা ধর্মীয় কার্যক্রম চালিয়ে যেতে চাইলে মিথ্যা মামলায় জড়ানো ও প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে জোরপূর্বক মুচলেকাতে সাক্ষর নেয়। মুচলেকায় লিখেছে, ১০ জুনের মধ্যে আমার বাবার শ্মশান মন্দির ও শ্মশানের অন্যান্য জিনিসপত্র সরিয়ে নিতে হবে। আদালতের নির্দেশনা থাকার পরও কিভাবে একটি বিদেশি এনজিওকে আমাদের উত্তরাধিকারপ্রাপ্ত সম্পতি লিজ দেয়া হলো তা আমাদের বোধগম্য নয়। এ বিষয়ে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সহৃদয় দৃষ্টি কামনা করছি। আমরা সনাতন ধর্মাবলম্বী পরিবারের পিতাহারা অসহায় সন্তানরা পরিবারের নিরাপত্তা ও সম্পত্তি ফিরে পেতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ প্রার্থনা করছি।

জুয়েল সরকার ও রিয়েল সরকার জানান, এই ৮৪ শতক জমি চৌধুরীহাটের বাসিন্দা চন্দ্রকুমার নন্দীর ছেলে অন্নদাচরণ নন্দীর। তার নামেই আরএস ও পিএস জরিপ আছে। অন্নদাচরণ নন্দী শ্মশান, পুকুরসহ এই ৮৪ শতক জমি ও তার অন্য সব সম্পত্তি তার মেয়ে রাধারণী সরকারের স্বামী তেজেন্দ্রলাল সরকার ও নাতি আশীষ বরণ সরকারের নামে উইল করে দিয়ে যান। এরপর থেকে তারাই ওই সম্পত্তি ভোগ দখল করে আসছিল। এসব সম্পত্তি অর্পিত সম্পত্তির ‘ক’ তপসিলভুক্ত হওয়ায় আশীষ বরণ সরকার অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যাপর্ন ট্রাইব্যুনালে মামলা করলে ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি ডিক্রি হয়। এর বিরুদ্ধে সরকারপক্ষ ২০২০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি আপিল করে। তবে দুই বছর মামলা চালানোর পর রাষ্ট্রপক্ষ আপিলটি স্থগিতের আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করে। ডিক্রি আমাদের নামে থাকা অবস্থায় কিভাবে একটি সম্পত্তি বিদেশি একটি এনজিওকে ইজারা বা লিজ দেয়া হয়েছে তা আমাদের বোধগম্য নয়। এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়েও আমরা কোনো সুরাহা পাইনি। তাই আমরা পিতাহারা সন্তানরা প্রধানমন্ত্রীর কৃপাদৃষ্টি প্রার্থনা করছি।