ভারতের শেষ শটটা সোজা ইয়ারজান বেগমের গ্লাভসে। পেনাল্টি স্পট থেকে গোলবার পর্যন্ত বল যাওয়ার পথটুকুতে প্রার্থনায় ছিল বাংলাদেশ গোলরক্ষকের গ্লাভজোড়া। সেটি বিফলে যেতে দেননি ইয়ারজান। গোটা ম্যাচে, টাইব্রেকে দলের ত্রাতা হওয়া গোলরক্ষক শেষ আঁচড়টাও দিলেন নিজের গ্লাভস দিয়ে। আনন্দে কাঁদল ইয়ারজান, আর শিরোপা জয়ের উল্লাসে মাতল বাংলার কিশোরীরা।


ফরম্যাট কিংবা বয়স—ভিন্নতা থাকলেও বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের দ্বৈরথ মানেই উত্তাপ। ব্যতিক্রম ঘটেনি সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে। দুই দেশের কিশোরীরা কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। প্রধমার্ধে ভারতের এগিয়ে যাওয়া, দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশের সমতা ফেরানো, নির্ধারিত সময় শেষ হয় ১-১ গোলে। জমজমাট এই ম্যাচ শেষ পর্যন্ত গড়ায় টাইব্রেকারে। টাইব্রেকে ভারতকে ৩-২ ব্যবধানে হারিয়ে সাফের শিরোপা নিজেদের করে নেয় বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৬ নারী দল।


প্রথমার্ধে এক গোলে পিছিয়ে পড়ে বিরতিতে যায় সাইফুল বারী টিটুর শিষ্যরা। বিরতির পর নিজেদের খেলার ধরনে বদল আনে বাংলাদেশ বাড়ায় গতি। আক্রমণে ব্যতিব্যস্ত করে তোলে ভারতকে। ৬৮ মিনিটে ডান প্রান্ত থেকে বাংলাদেশের একটি আক্রমণ ফ্রিকিকের বিনিময়ে প্রতিহত করে ভারতীয় রক্ষণভাগ। সেটিই কাল হয়ে দাঁড়ায়। আলপি আক্তারের শট কোনোমতে গোলরক্ষক বাঁচান। তবে, কর্ণার থেকে বিথীর শটে পা ছুঁইয়ে বল জালে জড়ান মরিয়ম।

মরিয়মের গোলে ম্যাচে সমতা ফেরায় বাংলাদেশ। এতে যেন প্রাণ ফিরে পায় পুরো দল। একের একের আক্রমণে ভারতকে তটস্থ করে রাখে বাংলার আলপি-সুরভীরা। ৮৮ ও ৯০ মিনিটে সুরভী-আলপির যুগলবন্দীতে ভারতের ডি বক্স কাঁপিয়ে দেয় বাংলাদেশ। দুবারই কোনোমতে রক্ষা পায় নীল-মেরুন নারীরা। নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষে খেলা গড়ায় টাইব্রেকে। ম্যাচ শেষের এক মিনিট আগে ভারত গোলরক্ষক বদলি করে নামায় দীর্ঘদেহী সুরাজ মনিকুমারিকে।

টাইব্রেকে বাংলাদেশের প্রথম শট ফিরিয়ে দেন মনিকুমারি, যেখানে ভারত লক্ষ্যভেদে সফল হয়। বাংলাদেশের পরের দুটি শট থেকে গোল আসে, ভারত মিস করে টানা দুটি। বলা ভালো গোল হতে দেননি গোলরক্ষক ইয়ারজান। চতুর্থ শট মিস করে বাংলাদেশ, ভারত সমতা ফেরায়। শেষ শটে বাংলাদেশ সপল হলে ৩-২ এ এগিয়ে যায় লাল-সবুজের দল। শেষ শটে ভারত গোল করলে খেলা গড়াতো সাডেন ডেথে, ব্যর্থ হলে শিরোপা বাংলাদেশের। ইয়ারজানের হাতে শিরোপাকে আগলে ধরে বাঘিনীরা, ভারতকে নীল বেদনায় ডুবিয়ে নেপালের কাঠমুণ্ডু মাতে লাল-সবুজের জয়োউল্লাসে।

এরে আগে ম্যাচের শুরুতেই ভারতীয় ফরোয়ার্ড আনুশকা কুমারিয়া এগিয়ে নেন দলকে। ম্যাচের বয়স তখন সবে চার মিনিট। মাঝমাঠ থেকে অতর্কিত এক আক্রমণে বল পেয়ে যান আনুশকা। শুরুতেই আনমার্কড থাকা আনুশকাকে পেছন থেকে বাংলাদেশি দুই ডিফেন্ডার থামানোর চেষ্টা করেন। তবে, দ্রতগতিতে দুজনকে ছিটকে বাম পায়ের শটে বল জানলে পাঠান। এগিয়ে যায় ভারত।

গোল হজম করে বাংলার মেয়েরা দমে যায়নি। টানা কয়েকটি আক্রমণ সাজায়। প্রথম পাঁচ মিনিটে এলোমেলো থাকলেও পরের পাঁচ মিনিটে দারুণ কিছু আক্রমণ তৈরি করেও ফিনিশিং দিতে পারেনি বাঘিনীরা। প্রধমার্ধের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশ সুযোগ তৈরির চেষ্টা করে। ফ্রি কিক আদায় করে নেয়। যদিও, সুবিধা করতে পারেনি তারা।

বাকিটা সময় দুদলই চেয়েছে গোল করতে। কিন্তু, বেশিরভাগ সময় বল মাঝমাঠেই ঘোরাঘুরি করেছে। ৩৭ মিনিটে ভারতের গোলদাতা আনুশকা বাংলাদেশের কয়েকজনকে কাটিয়ে ভালো সম্ভাবনা তৈরি করলেও সেই যাত্রায় রক্ষা পায় লাল-সবুজের দল। সবমিলিয়ে, ভারত পারেনি নিজেদের লিড এগিয়ে নিতে, বাংলাদেশ ব্যর্থ সমতা ফেরাতে। এক গোলে পিছিয়ে থেকেই তাই বিরতিতে যায় সাইফুল বারী টিটুর দল।