মহান জাতীয় সংসদ হলো জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতীক এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু।আমাদের সংবিধান অনুসারে সরকারকে সকল কর্মকান্ডের জন্য সংসদের নিকট জবাবদিহি করতে হয়।মাননীয় সংসদ সদস্যগণ হলো উহার অন্যতম চালিকাশক্তি।তাঁরা আইন প্রণয়নসহ দেশের উন্নয়ন কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করে অতীব গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে থাকেন।আইন প্রণয়ন এবং পাসের পূর্বে উহার ত্রুটি-বিচ্যূতি ও অসংগতি চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান,সংসদীয় কার্যক্রমে অংশ গ্রহণ,সংসদীয় কমিটিসমূহে প্রতিনিধিত্বকরণ,সংসদ বিতর্ক এবং বিভিন্ন প্রশ্নোত্তরে কার্যপ্রণালী বিধি,সংবিধান ও প্রচলিত আইনানুসারে গুরুত্বপূর্ণ মতামত/বক্তব্য প্রদান করেন। এমনকি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সংসদীয় রীতিনীতি সম্পর্কেও তাঁদের পর্যাপ্ত জ্ঞান ও ধারণা রাখতে হয়।এই পদের নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য প্রচলিত আইন/বিধিতে সুনির্দিষ্টভাবে কোন শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারিত নেই।শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়ে প্রতিবন্ধকতা না থাকার কারনে অতীত থেকে অশিক্ষিত,স্বশিক্ষিত,সল্পশিক্ষিত, অনেকক্ষেত্রে বিতর্কিত ব্যক্তিগণও এই গুরুত্বপূর্ণ পদের নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পেয়ে আসছেন।তাঁরা নির্বাচিত হলে সংসদে আইন প্রণয়নে কতটুকু ভুমিকা রাখতে পারবেন তা সহজে অনুমেয়।আমাদের সংবিধান প্রণয়ন কালে শিক্ষার হার ছিল নগণ্য।তখন উচ্চ শিক্ষার সুযোগ সুবিধা ছিল অপ্রতুল। বর্তমানে দেশে উচ্চ শিক্ষার হার অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।বিভিন্ন অঞ্চলে পর্যাপ্ত কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।বর্তমানে সরকারি অফিস/আদালতে চাকরি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ২০তম গ্রেডের অফিস সহায়ক (পিয়ন)দের নির্ধারিত শিক্ষাগত যোগ্যতা এস,এস,সি পাস এবং ক্লারিক্যাল কর্মচারীদেরও অনূন্য স্নাতক পাস হতে হয়।সংসদ সদস্য পদে( আইন প্রণেতা) নির্বাচনে অংশ গ্রহণের ক্ষেত্রে ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা অন্যূন স্নাতকোত্তর নির্ধারণ করা যেতে পারে।একজন সম্মানিত সংসদ সদস্যকে নিজ এলাকার উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ,সকল কর্মকান্ড সমন্বয় করে বাস্তবায়ন ও অগ্রগতি পরিদর্শন এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যথাযথ দিক নির্দেশনা প্রদান করতে হয়। একজন সংসদ সদস্য উচ্চ শিক্ষিত হলে ইউএনও বা অন্যান্য কর্মকর্তাদের উপর নির্ভর হতে হবে না এবং সংসদ অধিবেশনে বক্তব্য প্রদানকালে ভুলত্রুটি ও ভাষার উচ্চারনগত সমস্যায় পড়তে হবে না।তাছাড়া রাজনীতি করতে হলে শিক্ষার বিকল্প নেই। এতে ভবিষ্যত প্রজন্মকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে অনুপ্রাণিত করবে এবং দেশে দক্ষ নেতৃত্ব সৃষ্টি হবে।
অপরদিকে বিদ্যমান ব্যবস্থায় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বা উচ্চতর ডিগ্রি ব্যতিত স্কুল,কলেজ,মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি বা সদস্য হওয়া যায়।এর জন্য কোন শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারিত নেই।কমিটির সভাপতি প্রতিষ্ঠান পরিচালনাসহ উচ্চশিক্ষিত শিক্ষকদের নিয়ন্ত্রণ,তাঁদের নিয়োগ,পদোন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখে থাকেন। এসব দায়িত্বে যাঁরা থাকবেন তাঁদেরও নূন্যতম শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করা আবশ্যক।এতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে এবং কার্যক্রমও সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হবে।
(লেখক-একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা ও কলামিস্ট)