বাংলাদেশের ফরেন রিজার্ভ যুক্তরাষ্ট্র থেকে সরিয়ে নিরাপদ দেশগুলোতে স্থানান্তরের নির্দেশনা চেয়ে রিট করা হয়েছে। হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় অ্যাডভোকেট মো. মাহমুদুল হাসান এ রিট করেন।


আজ বুধবার (৩১ মে) হাইকোর্টে রিট দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান।


রিটে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানকে বিবাদী করা হয়েছে।

অ্যাডভোকেট মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘দেশের জনগণকে নিকট ভবিষ্যতে ভয়াবহ বিপর্যয় থেকে রক্ষার জন্য জনস্বার্থে রিট আবেদনটি দায়ের করেছি।’

রিট আবেদনে বলা হয়, ‘যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্র। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর পরাশক্তি। পৃথিবীর যেকোনো দেশের অর্থনীতি ও অবকাঠামো ধ্বংস করার ক্ষমতা যুক্তরাষ্ট্রের আছে। যুক্তরাষ্ট্র কোনো দেশকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে সামরিক শক্তি বা নিষেধাজ্ঞা উভয়‌ই প্রয়োগ করে। যুক্তরাষ্ট্র সামরিক শক্তি ব্যবহার করে আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া, ভিয়েতনামসহ বহু দেশকে ধ্বংস করে দিয়েছে এবং কোটি কোটি মানুষকে হত্যা করেছে।’

‘এছাড়া নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করে ইরান, রাশিয়া, কিউবা, উত্তর কোরিয়া, ইরাক, সুদান, ভেনেজুয়েলাসহ বহু দেশের অর্থনীতি পর্যদুস্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বর্তমানে বাংলাদেশ নিয়ে নানামুখী আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র বিস্তার লাভ করেছে। ষড়যন্ত্রের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের টার্গেটে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। যার ফলে যুক্তরাষ্ট্র র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। কিছু বিতর্কিত কর্মকাণ্ড থাকলেও আইনের শাসন রক্ষা, মাদক ও মানবপাচার দমনে র‌্যাবের অবদান অপরিসীম। অপরদিকে বিগত ২৪ মে বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে যুক্তরাষ্ট্র নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে, যা নিষেধাজ্ঞার চেয়ে মারাত্মক। উক্ত ভিসা নীতির মাধ্যমে রাজনৈতিক নেতা, সরকারি কর্মকর্তা ও বিজ্ঞ বিচারকদের টার্গেট করা হয়েছে’, রিটে উল্লেখ করা হয়।

রিট আবেদনে আরও বলা হয়, ‘দেশে আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিষয়ে অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদের অভাব রয়েছে। অপরদিকে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও দূতাবাসগুলোতে যেসব সরকারি কর্মকর্তা নিয়োজিত আছেন, তাদের অধিকাংশের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ের ওপর অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি নেই। ফলে এসব সরকারি কর্মকর্তারা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষায় যথাযথ অবদান রাখতে পারছে না। বাংলাদেশে বিশ্বের অন্যতম শান্তিপ্রিয় একটি দেশ। বাংলাদেশ সংবিধানের ২৫ অনুচ্ছেদ অনুসরণ করে বাংলাদেশ বহির্বিশ্বের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহবস্থান বজায় রেখে চলেছে।’

রিট আবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘বৈশ্বিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ দুঃখজনকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের টার্গেটে পরিণত হয়েছে। কোনো দেশ যুক্তরাষ্ট্রের টার্গেটে পরিণত হলে ফরেন রিজার্ভ জব্দ করা তাদের পুরোনো রীতি। যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে বহু দেশের ফরেন রিজার্ভ জব্দ করেছে এবং তাদের অর্থনীতি পদর্যুস্ত করেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এই সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে যে, অদূর ভবিষ্যতে যেকোনো অজুহাতে বাংলাদেশের ফরেন রিজার্ভ যুক্তরাষ্ট্র জব্দ করতে পারে। বাংলাদেশের অধিকাংশ ফরেন রিজার্ভ যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে জমা আছে। বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার ১৯৭২ এর ধারা ৭ (এ) (ডি) এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ ব্যাংক ফরেন রিজার্ভ ব্যবস্থাপনা করে থাকে। যেহেতু বাংলাদেশের অধিকাংশ ফরেন রিজার্ভ যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে জমা থাকে, তাই ওই ফরেন রিজার্ভ যদি যুক্তরাষ্ট্র যেকোনো অজুহাতে জব্দ করে, তাহলে দেশের অর্থনীতি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে। বাংলাদেশ প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য আমদানি করতে পারবে না। এতে করে দেশের জনগণের জীবন ঝুঁকিতে পড়বে। বহু লোকজন খাদ্যের অভাবে মারা যাবে। যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে যেসব দেশের ফরেন রিজার্ভ জব্দ করেছে, সেসব দেশের জনগণকে অবর্ণনীয় কষ্ট করতে হয়েছে।’

রিটে বলা হয়, ‘বাংলাদেশকে কেন তার অধিকাংশই ফরেন রিজার্ভ যুক্তরাষ্ট্রে রাখতে হবে? বাংলাদেশের অধিকাংশ ফরেন রিজার্ভ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাখার কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা নেই। দেশের জনগণের স্বার্থে অবশ্যই ন্যূনতম যতটুকু রিজার্ভ নিয়মিত ট্র্যানজেকশনের জন্য প্রয়োজন ততটুকু রিজার্ভ যুক্তরাষ্ট্রে রেখে বাদবাকি রিজার্ভ বাংলাদেশের জন্য নিরাপদ দেশ যেমন- চীন, ভারত, রাশিয়া, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশে স্থানান্তর করতে হবে। এছাড়া রিজার্ভের উল্লেখযোগ্য অংশ স্বর্ণ, হীরা ও অন্যান্য মূল্যবান ধাতুতে রূপান্তর করতে হবে। জনগণের স্বার্থে অবশ্যই বাংলাদেশ ব্যাংককে রিজার্ভ সুরক্ষায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’

রিটে বৈশ্বিক ষড়যন্ত্র ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি মোকাবিলায় সরকারি কর্মকর্তাদের ব্যর্থতার জন্য পাবলিক সার্ভিস কমিশন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দায়ী করা হয়েছে। রিটে বলা হয়, ‘পাবলিক সার্ভিস কমিশনকে অবশ্যই বিসিএস ফরেন ক্যাডারে শুধু তাদেরকেই নিয়োগ দিতে হবে, যাদের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি আছে। বিভিন্ন দেশের দূতাবাসগুলোতে কূটনৈতিক নিয়োগের ক্ষেত্রে যাদের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি আছে, তাদেরকে নিয়োগ দিতে হবে। ‘আন্তর্জাতিক সম্পর্ক’ জ্ঞানের একটি বিশেষায়িত বিষয়। এ বিষয়ের মেধাবী ডিগ্রিধারীরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও দূতাবাসগুলোতে নিয়োগ পেলে তারা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বাংলাদেশের জন্য ভালো অবদান রাখতে পারবেন।’