টি-টোয়েন্টি নিয়ে বাংলাদেশের হতাশার গল্প বহুদিনের। বাতাসে কান পাতলেই শোনা যেত হাহাকার। দিন বদলের হাওয়ায় সেই বাতাসে এখন সাফল্যের গান। ড্রেসিংরুম থেকে ভক্তদের হৃদয়—সবখানে স্বস্তির রেণু। হবেই বা না কেন? এ বাংলাদেশ যে লিখছে একের পর এক জয়ের গল্প। সেই গল্পের নয়া অর্জন আফগান বধ। রশিদ-মুজিবদের  স্পিনকে তুড়ি মেরে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতল লাল-সবুজের দেশ।


দুই ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে বৃষ্টি আইনে বাংলাদেশ জিতেছে ৬ উইকেটের ব্যবধানে। টানা দুই জয়ে ২-০ ব্যবধানেই সিরিজ নিজেদের করে নিল সাকিব আল হাসানের দল। জয়ের পথেই বাংলাদেশের ক্রিকেট যোগ হলো আরেকটি পালক। আফগানদের হারিয়ে ঘরের মাঠে প্রথমবার হ্যাটট্রিক সিরিজ জয়ের ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ। এর আগে ২০২১ সালে আরেকবার জিতলেও সেটি ছিল হোম-অ্যাওয়ে মিলিয়ে। এবার ঘরের মাঠেই একে একে বধ করল বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড ও আফগানিস্তানকে। হোম-অ্যাওয়ে মিলিয়ে জিতল টানা চারটি।  


শুধু তাই নয়, চলতি বছরটিকে ধরে নেওয়া যায় টি-টোয়েন্টির সেরা বছর। বাংলাদেশ আজ তুলে নিল এ বছরে নিজেদের সপ্তম জয়। যা এলো স্রেফ ৮ ম্যাচে। ২০২১ সালে যদিও এরচেয়ে বেশি জয় এসেছিল। কিন্তু সেখানে ১১ জয়ের বিপরীতে ছিল ১৬টি হার। তাই পরিসংখ্যান বিবেচনায় এবারেরটা এখন পর্যন্ত সেরা সময় ধরাই যায়। 

আরেকটি সিরিজ জয়ের রূপকথা তাসকিনরা সিলেটের ভেন্যুতে। আজ রোববার (১৬ জুলাই) সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে জয়ের জন্য মাত্র ১১৯ রানের লক্ষ্য পায় বাংলাদেশ। যা তাড়া করতে নেমে সহজেই জয়ের বন্দরে নোঙর ফেলে স্বাগতিকরা।

রান তাড়ায় নেমে দারুণ জুটি উপহার দেন লিটন দাস ও আফিফ হোসেন। প্রথমবার ওপেনিংয়ে নামা আফিফ লিটনের সঙ্গে ব্যাট চালান নির্ভার তালে। প্রথম দুই ওভারে ফারুকি ও ওয়াফাদারকে ৫ বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ইনিংস শুরু করেন লিটন। ২ ওভারেই দলীয় রান ২৬, ৫ ওভারে যা দাঁড়ায় ৫০ –এ। 

হাত খুলে খেলতে থাকা এই জুটিকে দশম ওভারে থামায় আফগানরা। এক ওভারেই জোড়া ধাক্কা দেন মুজিব। প্রথমে রশিদ খানের হাতে ক্যাচ বানিয়ে লিটনকে ফেরান মুজিব। ৬ চারে ৩৬ বলে ৩৫ করে থামেন ডানহাতি ওপেনার। এরপর করিম জানাতের হাতে ক্যাচ বানান আফিফকে। ২০ বলে ২৪ করে ফেরেন আফিফ। শুরুর জুটি ভাঙে ৬৭ রানে।

এরপর শান্তও দ্রুত ফিরলে কিছুটা চাপ বাড়ে বাংলাদেশের। কিন্তু উইকেটে দৃঢ়তা দেখিয়ে সেই চাপ দূর করেন সাকিব ও তাওহিদ। ১৭ বলে ১৯ রান করে তাওহিদ ফিরলে ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন সাকিব। দলের জয়ের পথে ১১ বলে ১৮ রানের ইনিংস উপহার দেন অধিনায়ক। শেষ দিকে ছক্কা হাঁকানো শামীম করেন ৭ রান। 

এর আগে ব্যাট করতে নেমে ১৭ ওভারে ৭ উইকেটে ১১৬ রান তোলে আফগানিস্তান। ম্যাচের ওভার কমায় বাংলাদেশের সামনে বৃষ্টি আইনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ১১৯ রানের। 

প্রথম ম্যাচের মতো কন্ডিশন কাজে লাগাতে এদিনও বোলিং বেছে নেন সাকিব। অধিনায়কের সিদ্ধান্ত প্রমাণ শুরুতেই দেন বোলাররা। বল হাতে প্রথম ওভারেই তাসকিন আহমেদ পেয়ে যান উইকেটের দেখা। ডানহাতি পেসারের অফ স্টাম্পের বাইরের শর্ট বল পুল করতে গিয়ে টাইমিং গড়বড় করেন রহমানউল্লাহ গুরবাজ। ব্যাটের কানায় লেগে বল উঠে যায় আকাশে। নিজের বলে নিজেই ক্যাচ নিয়ে উচ্ছ্বাসে মাতেন তাসকিন।

নিজেদের দ্বিতীয় ওভারে ফের উইকেট উৎসব। এবার তাসকিন বিদায় করেন আরেক ওপেনার জাজাইকে। তাসকিনের স্টাম্প বরাবর বল খেলতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন জাজাই (৪)। 

জোড়া ধাক্কার পর জুটি গড়ার চেষ্টা করেন মোহাম্মদ নবী ও ইব্রাহিম জাদরান। তখনই বৃষ্টি নামে সিলেটের আকাশে। বৃষ্টিতে দেড় ঘণ্টা পর ফের মাঠে গড়ায় লড়াই। কার্টেল ওভারে ম্যাচ নেমে আসে ১৭ ওভারে। 

বৃষ্টির পর মাঠে নেমেই উইকেট হারায় আফগানিস্তান। মুস্তাফিজের ফুল লেনথ ডেলিভারিতে উইকেটের পেছনে লিটন দাসের হাতে ক্যাচ বানিয়ে ফিরিয়ে দেন নবীকে (১৬)। এরপর বোলিংয়ে এসে সাকিব তুলে নেন জোড়া উইকেট। নিজের দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে থামান ইব্রাহিম জাদরানের প্রতিরোধ, শেষ বলে বিদায় করেন নাজিবুল্লাহ জাদরানকে। বাংলাদেশের বোলারদের দাপটে কোনোমতে ১০০ ছাড়ানো পুঁজি পায় আফগানরা। যা বাংলাদেশের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর 

আফগানিস্তান : ১৭ ওভারে ১১৬/৭ (গুরবাজ ৮, জাজাই ৪, জাদরান ২২, নবী ১৬, নাজিবুল্লাহ ৫, জানাত ২০, ওমরজাই ২৫, রশিদ ৬, মুজিব ১; তাসকিন ৪-০-৩৩-৩, হাসান ৩-০-২০-০, নাসুম ৪-০-১৫-০, মুস্তাফিজ ৩-০-৩০-২, সাকিব ৩-০-১৫-২)।

বাংলাদেশ : ১৬.১ ওভারে ১১৯/৪ (লিটন ৩৫, আফিফ ২৪, শান্ত ৪, সাকিব ১৮, তাওহিদ ১৯, শামিম ৭; ফারুকি ৩-০-১৯-০, ওয়াফাদার ৩.১-০-৩০-০, মুজিব ৪-০-২৮-২, রশিদ ৪-০-১৯-০, ওমরজাই ৩-০-১৭-২)। 

ফল : ৬ উইকেটে জয়ী বাংলাদেশ 

সিরিজ : ২-০ ব্যবধানে জয়ী বাংলাদেশ।