ঠিক এমন একটা শুরুই তো চেয়েছিল বাংলাদেশ! বল হাতে প্রতিপক্ষকে চেপে ধরা। ব্যাট হাতে বীরদর্পে সেই লক্ষ্য ছাপিয়ে যাওয়া। মাঠের বাইরের সব বিতর্ক থামাতে প্রয়োজন ছিল দুর্দান্ত এক জয়ের। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্বপ্নযাত্রাটা ঠিক তেমনভাবেই শুরু হলো। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে মোড়ানো হিমালয়ের কোলঘেঁষা ধর্মশালাও আপন করে নিয়েছে বাংলাদেশকে। অনবদ্য ক্রিকেটশৈলীতে বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানকে হেসেখেলে হারিয়েছে বাংলাদেশ। ছয় উইকেটের জয়ে লাল-সবুজের আত্মবিশ্বাসের পালে লেগেছে দুরন্ত হাওয়া।


ভারতের ধর্মশালায় দুদলের ছিল এটি প্রথম ম্যাচ। শুরুর মিশনে সফল বাংলাদেশ। দারুণ বোলিংয়ে আগে ব্যাট করতে নামা আফগানিস্তানকে পুরো ওভার খেলতে দেয়নি বাংলাদেশ। মাত্র ৩৭.২ ওভার ব্যাট করে আফগানিস্তান থেমে যায় ১৫৬ রানে। জবাব দিতে নেমে বাংলাদেশ সময় নিয়েছে ৩৪.৪ওভার। ছোট লক্ষ্য তাড়ায় ১৫৮ রান করে সহজ জয় তুলে নিয়েছে লাল-সবুজের দল।


মেঘ-পাহাড়ের ভেন্যুতে বোলাররা সুবিধা লুফে নিতে পারেন। সেই কথা ভেবে বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব টস জিতে বোলিং নিতে ভুল করলেন না। কিন্তু শুরুতে আফগানদের ব্যাটিং ভড়কে দিয়েছিল বাংলাদেশকে। ইব্রাহিম জাদরান ও রহমানউল্লাহ গুরবাজের রানের গতি দেখে মনে হয়েছিল রান ছাড়াবে পাহাড় সমান। প্রথম আট ওভারে উল্টো বাংলাদেশের ওপর চড়াও হন আফগান ওপেনাররা।

কিন্তু দলের বিপদে সাকিব কি আর বসে থাকেন? পেসাররা যখন হতাশা দেখছিলেন তখনই ত্রাতা হয়ে উঠলেন অধিনায়ক। তিন উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশকে ফেরালেন কক্ষপথে। সেই সঙ্গে মেহেদী হাসান মিরাজের স্পিন ঘূর্ণি ও শেষে তাসকিন, মুস্তাফিজ, শরিফুলদের ক্যামিওতে আফগানদের দেড়শতে আটকে দেয় বাংলাদেশ।

বাকি গল্প লিখলেন ব্যাটাররা। লক্ষ্য ছিল মাত্র ১৫৭ রানের। যা তাড়ায় বরাবরের মতো হতাশ করেন ওপেনাররা। ইনিসের সপ্তম ওভারের মধ্যেই দুই ওপেনারকে হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। শুরুতে রানআউটে আটকা পড়েন তানজিদ তামিম। দ্রুত রান নিতে গিয়ে নাজিবউল্লাহ জাদরানের সরাসরি থ্রোতে আউট হন তিনি। ১৯ রানে ভাঙে উদ্বোধনী জুটি, ৫ রান করেন তামিম।

এরপর লিটন দাস মূলত ফজল হক ফারুকির বলে বেরিয়ে এসে খেলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু টাইমিং মেলাতে পারেননি। ব্যাটের কানায় লেগে বল আঘাত হাতে স্টাম্পে। ১৮ বলে ১৩ রান করেন ফেরেন তিনি, ২৭ ওভারে বাংলাদেশ হারায় দ্বিতীয় উইকেট।

শুরুর ধাক্কা সামাল দিয়ে জুটি বাধেন মিরাজ ও নাজমুল হোসেন শান্ত। যদিও বেশ কবার ক্যাচ তুলে দেন। তবে, আফগান ফিল্ডাররা তা মিস করে জীবন দেন দুজনকে। এই জুটিই পড়ে হয়ে উঠে আফগানদের মাথাব্যথার কারণ। ১২৯ বলে ৯৭ রানের এই জুটিতেই জয়ের পথ লিখে ফেলে বাংলাদেশ।

বল হাতে দারুণ করা মিরাজ ব্যাট হাতেও ছিলেন দুর্দান্ত। ওয়ানডাউনে নেমে বাংলাদেশের কাজটা সহজ করে দেন এই অলরাউন্ডার। উইকেটে থিতু হয়ে ৫৮ বলে তুলে নেন ক্যারিয়ারের তৃতীয় হাফসেঞ্চুরি। শেষ পর্যন্ত তিনি খেলেন ৭৩ বলে ৫৭ রানের ইনিংস। তাঁর সঙ্গে ক্যারিয়ারের পঞ্চম হাফসেঞ্চুরি করা শান্ত খেলেন ৮৩ বলে ৫৯ রানের ইনিংস। শেষ দিকে সাকিব করেন ১৪ রান। দুই বিভাগের দাপটে ৯২ বল হাতে রেখেই বাংলাদেশ তুলে নিয়ে স্বস্তির জয়।

এর আগে ব্যাট করতে নামা আফগানিস্তানের হয়ে সর্বোচ্চ ৪৭ রান করেন গুরবাজ। ওপেনিংয়ে নামা এই ব্যাটারের ইনিংস সাজানো ছিল ৬২ বলে চার বাউন্ডারি ও এক ছক্কা দিয়ে। বাকিদের কেউ ইনিংস বড় করতে পারেননি। আরেক ওপেনার জাদরান করেন ২৫ বলে ২২ রান। সমান ২২ রান আসে ওমরজাইয়ের ব্যাট থেকে। বাকিরা পাত্তা পানি বাংলাদেশের বোলারদের সামনে।

বাংলাদেশের পক্ষে তিনটি করে উইকেট শিকার করেন সাকিব ও মিরাজ। সাকিব ৩০ রানে তিনটি এবং মিরাজ ২৫ রানে নেন তিন উইকেট। শরিফুল নেন দুই উইকেট। তাসকিন ও মুস্তাফিজ পান একটি করে উইকেট।

সংক্ষিপ্ত স্কোর :

আফগানিস্তান : ৩৭.২ ওভারে ১৫৬/১০ (গুরবাজ ৪৭, জাদরান ২২, রহমত ১৮, শহীদি ১৮, নাজিবুল্লাহ ৫, নবী ৬, ওমর ২২, রশিদ ৯, মুজিব ১, নাভিন ০, ফারুকি ০*; তাসকিন ৬-০-৩২-১, শরিফুল ৬.২-১-৩৪-২, মুস্তাফিজ ৭-১-২৮-১, সাকিব ৮-০-৩০-৩, মিরাজ ৯-৩-২৫-৩, মাহমুদউল্লাহ ১-০-৭-০) 

বাংলাদেশ : ৩৪.৪ ওভারে ১৫৮/৪  (তামিম ৫, লিটন ১৩, মিরাজ ৫৭, শান্ত ৫৯*, সাকিব ১৪,  মুশফিক ২* ; ফারুকি ৫-০-১৯-১, মুজিব ৭-০-৩০-০, নবীন ৫.৪-০-৩১-১, রশিদ ৯-০-৪৮-০, নবী ৬-১-১৮-০, ওমরযাই ২-০-৯-১)

ফল : বাংলাদেশ ৬ উইকেটে জয়ী