ফিলিস্তিনের গাজা, দখলকৃত পশ্চিম তীর এবং ইসরায়েলের অভ্যন্তরে পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়েছে হামাস ও ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। টানা চতুর্থ দিন মঙ্গলবার (৯ অক্টোবর) দিনগত রাত পর্যন্ত ফিলিস্তিনের (গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীর) ৯০০ জনের বেশি এবং ইসরায়েলের ১০০০ জনের বেশি নিহত হয়েছে। খবর আলজাজিরার।


গত শনিবার (৭ অক্টোবর) কয়েক দশকের মধ্যে ইসরায়েলে সবচেয়ে বড় হামলা চালায় হামাস। এরপর পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে ইতোমধ্যে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় খাদ্য ও পানি সরবরাহ বন্ধসহ পুরো মাত্রার অবরোধ ঘোষণা করেছে ইসরায়েল। একইসঙ্গে হামাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছে দেশটির সেনাবাহিনী। ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার বিভিন্ন অংশে বিমান হামলাও করছে তারা। হামাসের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার অংশ হিসেবে ইসরায়েল তিন লাখ সৈন্য মাঠে নামিয়েছে। ১৯৭৩ সালের ইয়োম কিপ্পুর যুদ্ধের পর ইসরায়েলের এটিই সবচেয়ে বড় সেনা সমাবেশ। তখন চার লাখ রিজার্ভ সৈন্য মোতায়েন করেছিল ইসরায়েল। টাইমস অব ইসরায়েল এ তথ্য জানিয়েছে।


স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) দিনগত রাত ৩টা পর্যন্ত হতাহতের সর্বশেষ পরিসংখ্যান হলো ইসরায়েলের হামলায় গাজায় কমপক্ষে ৯০০ জন নিহত এবং চার হাজার ৫০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। এছাড়া দখলকৃত পশ্চিম তীরে কমপক্ষে ২১ জন নিহত এবং ১৩০ জন আহত হয়েছেন। অপরদিকে পাল্টা হামলায় ইসরায়েলের ১০০০ জনের বেশি নিহত এবং কমপক্ষে দুই হাজার ৮০০ জন আহত হয়েছেন। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, প্যালেস্টাইন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ও ইসরায়েলি মেডিকেল সার্ভিসেস এ পরিসংখ্যান জানিয়েছে।

সোমবার (৯ অক্টোবর) ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জাতির উদ্দেশে রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যমে দেওয়া ভাষণে  বলেন, ‘ইসরায়েল একটি যুদ্ধে আছে। আমরা এই যুদ্ধ চাইনি। সবচেয়ে নৃশংস ও বর্বর উপায়ে আমাদেরকে বাধ্য করা হয়েছে। যদিও ইসরায়েল এই যুদ্ধ শুরু করেনি, তবে ইসরায়েল এটি শেষ করবে।’

গত শনিবার সকালে সাড়ে ৬টার দিকে হামাস ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে মুহুর্মুহু রকেট হামলা চালায়। হামাসের দাবি, তারা প্রাথমিকভাবে পাঁচ হাজার রকেট ছুড়েছে। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী অবশ্য জানিয়েছে, দুই হাজার ৫০০ রকেট ছোড়া হয়েছে।

রকেট হামলার প্রায় এক ঘণ্টা পরে হামাসের যোদ্ধারা স্থল, আকাশ ও সমুদ্র পথে এক অভূতপূর্ব বহুমুখী অভিযান চালিয়ে ইসরায়েলে প্রবেশ করেন। সম্প্রতি ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীরা আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে হামলা চালানোর পরই আক্রমণ শুরু করে হামাস। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইসরায়েলের হাতে রেকর্ড সংখ্যক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা গাজার জনসংখ্যা প্রায় ২৩ লাখ। ভূমধ্যসাগরের উপকূলে ইসরায়েল ও মিসরের মাঝের এই উপত্যকার আয়তন প্রায় ৩৬৫ বর্গকিলোমিটার। ২০০৭ সাল থেকে ইসরায়েল গাজার আকাশসীমা এবং আঞ্চলিক জলসীমার ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছে। এছাড়া গাজার ভেতরে ও বাইরে পণ্য সরবরাহ ও মানুষের চলাচল সীমিত করেছে ইসরায়েল।


গাজায় ক্রমাগত হামলার জেরে এ পর্যন্ত বাস্তচ্যুত হয়েছে এক লাখ ৮৭ হাজার ৫০০’রও বেশি মানুষ। জাতিসংঘের মানবিক সংস্থা ওসিএইচএ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গত শনিবার থেকে মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) পর্যন্ত গাজা উপত্যকায় বাস্তুচ্যুত হয়েছে এক লাখ ৮৭ হাজার ৫০০’রও বেশি মানুষ। বেশিরভাগ গাজার বাসিন্দা জাতিসংঘের স্কুলগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে।