জার্মানির ম্যানুয়েল নয়ার, আর্জেন্টিনার এমিলিয়ানো মার্টিনেজের সঙ্গে হয়তো বাংলাদেশের গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকোর তুলনা চলে না। তবে কুয়েত বনাম বাংলাদেশের ম্যাচের পারফরমার হিসেবে জিকোকে বাংলার বাজপাখি বললে মনে হয় খুব একটা ভুল বলা হবে না। কুয়েতের বিপক্ষে জিততে না পারলেও জিকোকে কৃতিত্ব দিতেই হয়।


১৯৮৬ সালে এশিয়ান গেমসে সবশেষ মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কুয়েতের বিপক্ষে খেলেছিল বাংলাদেশ। ৩৭ বছর পর আবারও প্রতিপক্ষ সেই বিশ্বকাপ খেলা দেশটি। যদিও এবার মঞ্চটা ভিন্ন। 


আজ শনিবার (১ জুলাই) বেঙ্গালুরুর কান্তিরাভা স্টেডিয়ামে ফাইনাল নিশ্চিতের মিশনে মাঠে নামে বাংলাদেশ। অতিরিক্ত সময়ে আল ব্লাউশির গোলে ১-০ ব্যবধানে হেরে সেমি থেকে বিদায় নিতে হল বাংলাদেশকে।

র‌্যাঙ্কিয়ে বাংলাদেশ থেকে ঢের এগিয়ে কুয়েত। স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের জন্য এই ম্যাচ বড় এক চ্যালেঞ্জ বটে। কারণ বিশ্বকাপে খেলা কুয়েত গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবেই সেমি নিশ্চিত করেছে। অন্যদিকে রানার্সআপ হিসেবে শেষ চারে জায়গা করে নিয়েছে জামাল-মোরসালিনরা।

ভুটানের বিপক্ষে চোটের কারণে একাদশে সুযোগ না পাওয়া তারিক কাজীকে ফেরানো হয় এই ম্যাচে। ম্যাচের প্রথম মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারত বাংলাদেশ। মাঠের ডান প্রান্ত দিয়ে রাকিবের বাড়ানো বলে কুয়েতের গোলরক্ষক মারজুককে একা পেয়েও বল জালে জড়াতে পারেননি ওয়ান্ডার বয় শেখ মোরসালিন। ম্যাচের ষষ্ঠ মিনিটে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল কুয়েত। তবে রক্ষণভাগে গোললাইন থেকে  বল ক্লিয়ার করে বাংলাদেশকে এ যাত্রায় বাঁচিয়ে দেন ঈসা ফয়সাল।

ম্যাচের ২৪তম মিনিটে ফ্রি কিক থেকে ফের এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায় কুয়েত। তবে গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকোর দুর্দান্ত সেভে সে যাত্রায় রেহাই পায় বাংলাদেশ। এরপর ম্যাচের ২৭তম মিনিটে বক্সের বেশখানিকটা দূর থেকে রাকিবের বাঁ পায়ের জোরাল শট সহজেই প্রতিহত করেন কুয়েতের গোলরক্ষক।

ম্যাচের ২৯তম মিনিটে ফ্রি কিকের সুবাদে বল পেয়ে যান কুয়েতের আল রাশিদি। সেই সুযোগে তার দূরপাল্লার শট জালে ঢুকেই যাচ্ছিল, তবে জিকোর বিশ্বস্ত হাতে এযাত্রাতেও বেঁচে যায় বাংলাদেশ। এক মিনিট পরেই ফের একবার গোলের ভালো সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। রাকিবের ক্রস থেকে এবারও গোল করতে ব্যর্থ হন মোরসালিন।

এরপর ৩৯তম মিনিটে আল দাশধির গড়ানো শটে ফের জিকোর প্রতিরোধ। সবমিলিয়ে প্রথমার্ধের যতবারই বাংলাদেশের রক্ষণভাগে আক্রমণ করেছে কুয়েত, ততবারই তাদের হতাশ করেছেন জিকো। বাকি সময়ে আর তেমন আক্রমণ না হওয়ায় গোলশূন্য অবস্থায় বিরতিতে যায় বাংলাদেশ।

প্রথমার্ধের মত দ্বিতীয়ার্ধের শুরুটাও ভালো করে বাংলাদেশ। ম্যাচের ৫৪তম মিনিটে ডি বক্সের বাইরে থেকে রাকিবের বাঁ পায়ের জোরাল শট বারের ওপর দিয়ে চলে গেলে সুযোগ হারায় বাংলাদেশ। এরপর ম্যাচের ৬০তম মিনিটে মোরসালিনের পাস থেকে জিরো অ্যাঙ্গেল থেকে রাকিবের শট বারে লাগলে হতাশ হতে হয় বাংলাদেশকে।

ম্যাচের ৬২তম মিনিটে দাশদির জোড়া আক্রমণ দারুণ দক্ষতার সঙ্গে ঠেকিয়ে দলকে রক্ষা করেন জিকো। ৭০তম মিনিটে আল খালদির জোরাল শট ফের ঠেকিয়ে দেন এই গোলরক্ষক। ৭১তম মিনিটে বিশ্বনাথের বাড়ানো বল নিয়ন্ত্রনে নিতে পারেননি ফাহিম। ৭৪ মিনিটে ডি বক্সের মধ্যে আবদুল্লাহর আচমকা শট রুখে দেন জিকো।

৮৭তম মিনিটে ফের গোলের সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। ফাহিমের ক্রস থেকে ঠিকঠাক মাথা ছোঁয়াতে পারেননি রাকিব। নির্ধাতির সময়ে ফল না আসায় খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। ৯১তম মিনিটে নিশ্চিত গোলের দেয়া পেয়ে গিয়েছিল কুয়েত। তবে আবদুল্লার শট বারের ওপর দিয়ে চলে যাওয়া হতাশ হতে হয় কুয়েতকে।

৯৮তম মিনিটে প্রতি আক্রমণে আল রাশিদির দুর্দান্ত শট অতিমানবীয় এক সেভে ঠেকিয়ে দেন জিকো। ১০৭তম মিনিটে বাংলাদেশের রক্ষণের ভুলে আল ব্লাউশির গোলে ১-০ তে পিছিয়ে যায় বাংলাদেশ। ১১৩তম মিনিটে গোলের সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। তবে তা হেলায় হারায় ফরোয়ার্ডরা। বাকি সময়ে আর তেমন কোনো আক্রমণ করতে না পারায় ১-০ গোলে হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা শিষ্যদের।