সাত দিন আগে সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে ছিনতাই হওয়া বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর নাবিকরা সুস্থ আছেন বলেই ধারণা করা হচ্ছে। গত শনিবার (১৬ মার্চ) সবশেষ তারা দেশে যোগাযোগ করেছে বলে  জানিয়েছেন সমুদ্রগামী বাণিজ্যিক জাহাজের ক্যাপ্টেন আতিক ইউ এ খান। তিনি বেশ কয়েক দিন ধরে জাহাজটির নাবিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে আসছেন। তার মতে, কয়লা নিয়ে যেই ঝুঁকির আশঙ্কা ছিল তা কমে গেছে।

মোজাম্বিক থেকে ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে দুবাই যাওয়ার পথে মঙ্গলবার (১২ মার্চ) বেলা দেড়টায় ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের কবলে পড়ে এমভি আবদুল্লাহ। অপহৃত জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ ও ২৩ নাবিককে নিয়ে সোমালিয়া উপকূলের কাছাকাছি অবস্থান করছে জলদস্যুরা। মঙ্গলবার দুপুর থেকে বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) দুপুর পর্যন্ত ৪৫৫ নটিক্যাল মাইল পথ পাড়ি দিয়ে জলদস্যুরা নিজেদের নিয়ন্ত্রিত জলসীমায় পৌঁছেছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনও প্রকার মুক্তিপণ চাওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন জাহাজটির মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান কেএসআরএমের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা। তিনি জানান, এখন জাহাজটি সেখানে রয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে তারা এখনও কোনও দাবি-দাওয়া জানায়নি। তবে জিম্মি নাবিকদের উদ্ধারে আমরা সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

ক্যাপ্টেন আতিক ইউ এ খান বলেন, আজকে আর যোগাযোগ করেনি তারা। কোনও মেসেজও পাঠায়নি। সবশেষ শনিবার রাতে ভয়েজ মেসেজ পাঠিয়েছিল আমাকে। তাদের কাছ থেকে জানতে পেরেছি, জিম্মি নাবিকদের স্বাধীনভাবে কাজের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। জাহাজে যে কয়লা এবং মেশিনারিজ আছে তা নিয়ে তারা কাজ করতে পারবে। তাতে যে শঙ্কা ছিল কয়লা হিট হয়ে গ্যাস উৎপন্ন হতে পারে, সেই শঙ্কা কমে গেলো। তাতে বিস্ফোরণের শঙ্কাও কমে গেছে।


তিনি আরও বলেন, জলদস্যুদের আচরণ এখন পর্যন্ত ভালো। জাহাজের নাবিকদের সঙ্গে ২০-৩০ জন জলদস্যু খাবারে ভাগ বসাচ্ছে। তাতে জাহাজে থাকা খাবার-পানি দ্রুত শেষ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কারণ যে পরিমাণ মানুষের খাবার জাহাজে ছিল তার দ্বিগুণ মানুষ খাবার গ্রহণ করছে। হয়তোবা ১২-১৫ দিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। খাবার শেষ হলে উপকূল থেকে খাবার সংগ্রহ করে সরবরাহ করতে পারে জলদস্যুরা কিন্তু পানি কীভাবে দেবে সেটা জানা নেই। ইফতার-সেহরি ও নামাজের সুযোগ পাচ্ছে নাবিকরা। ভারতীয় নেভির জাহাজ আর ইউরোপীয় জাহাজ একটু দূরে অবস্থান নিয়ে এমভি আব্দুল্লাহর উপর নজর রাখছে।

তার মতে, সোমালিয়ার জলদস্যুরা বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত খবর দেখে তথ্য পাচ্ছে।


তিনি বলেন, মিডিয়া মনিটরিং করা খুব কঠিন কিছু না তাদের জন্য। সেখানে ইন্টারনেট আছে, গুগল ঘাঁটলেই সব জানতে পারছে তারা। নাবিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি কিন্তু আমাদের দেখতে হবে। আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। তথ্য যাচাই না করে প্রকাশ করা উচিত হবে না। আমাকে একজন নাবিক মেসেজ দিয়ে জানিয়েছে যে, জলদস্যুদের যে দোভাষী— সে বাংলাদেশের টিভি আর মিডিয়ার উপর চোখ রেখেছে। তাই গুজব রটানো বা নাবিকরা বিপদে পড়ে এমন কিছু যেন মিডিয়ার মাধ্যমে ছড়ানো না হয়। কারণ ভারতীয় নৌবাহিনী জাহাজ উদ্ধার করেছে- এমন খবরে তারা বেশ দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল।

এদিকে, জাহাজ জিম্মি করার এক সপ্তাহ পরও দস্যুদের পক্ষ থেকে এখনও যোগাযোগ না করায় নাবিকদের উদ্ধারের বিষয়ে কোনও অগ্রগতি হয়নি। এর মধ্যে বারবার জাহাজের অবস্থান পরিবর্তন করছে জলদস্যুরা।

অন্যদিকে রয়টার্সের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, জিম্মিদের উদ্ধারে অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারতীয় নৌ বাহিনী এবং সোমালীয় পুলিশ। আধা-স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল পুন্টল্যান্ডের পুলিশ বাহিনী জানিয়েছে, তারা উচ্চ সতর্কাবস্থায় রয়েছে এবং এমভি আবদুল্লাহকে আটক করা জলদস্যুদের বিরুদ্ধে অভিযানে অংশ নিতে প্রস্তুত রয়েছে।