গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, গ্রামীন ব্যাংকের মালিক আমি না। সেখানে আমি কর্মচারী মাত্র। সুদ যদি গ্রহণ করে থাকেন, মালিকরাই গ্রহণ করেছে। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারক সৈয়দ আরাফাত হোসেনের আদালতে আজ বৃহস্পতিবার (২ মে) অর্থ আত্মসাতের মামলায় হাজিরা দিতে এসে সাংবাদিকদের এসব বলেন তিনি। 


ড. ইউনূস বলেন, এখানে দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে উপস্থিত হয়েছি। দুর্নীতি দমন কমিশন আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে দুর্নীতির। আমি জালিয়াতি করেছি, অর্থ আত্মসাৎ করেছি, অর্থপাচার করেছি। এ রকম বহু ভয়াবহ শব্দ আমার অপরাধ হিসেবে বলা হয়েছে। আপনারা আমাকে বহুদিন থেকে চিনছেন। এ অপরাধগুলো আমার গায়ে লাগানোর মতো অপরাধ কি না, আপনারা বিবেচনা করবেন। আগে যেরকম আপনারা বিবেচনা করেছেন। তিনি বলেন, আমাকে যখন গ্রামীণ ব্যাংক থেকে বের করে দেওয়া হয়, তখন ৯৭ শতাংশের মালিক ছিলেন তারা। সুদ যদি গ্রহণ করে থাকেন, তারাই করেছেন। আমি একজন কর্মচারী মাত্র। সেটা আপনারা জানতেন। আমি কখনও গ্রামীণ ব্যাংকের মালিক ছিলাম না। কাজেই আপনারা সেটা গ্রহণ করেননি। আমাকে বলা হয়েছে, আমি গরিবের রক্তচোষা। সেটাও আপনারা গ্রহণ করেননি। রক্ত চুষতে হলে যে কাজটা করতে হয়, সেটা আমি করিনি, আপনারা দেখেছেন। 


ড. ইউনূস আরও বলেন, আজ যে অভিযোগ এনেছে, সেগুলো একই নিয়মের, একই কাহিনীর অন্তর্ভুক্ত। কাজেই আপনাদের বিবেচনার ওপর ছেড়ে দিলাম। আজ যে অভিযোগ জোচ্চুরি, অর্থ আত্মসাৎ, অর্থপাচার এগুলো সত্য কি না আপনাদের ওপর ছেড়ে দিলাম।

এর আগে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন। বেলা ১১টা ২০ মিনিটে ড. মুহাম্মদ ইউনূস আদালতে পৌঁছান। এরপরে অভিযোগ গঠনের শুনানি পেছানোর জন্য সময়ের আবেদন করেন তার আইনজীবী। শুনানি শেষে বিচারক সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে আগামী ২ জুন পরবর্তী শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন।

মামলার নথিপত্র থেকে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ৩০ মে গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি ২২ লাখ ছয় হাজার ৭৮০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। সংস্থার উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে মামলাটি করেন। পরবর্তীতে ২০২৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার।

দুদকের মামলায় আসামি ছিলেন ১৩ জন। অভিযোগপত্রে আসামিদের বিরুদ্ধে ৪০৯, ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১ ও ১০৯ ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২-এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

মামলার নথি থেকে আরও জানা গেছে, গত ২ এপ্রিল ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আস সামছ জগলুল হোসেনের আদালত এ অভিযোগপত্র গ্রহণ করে মামলার বিচারের জন্য ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এ বদলি করে দেন। এজাহারে বলা হয়েছে, আসামিরা ২৫ কোটি ২২ লাখ ছয় হাজার ৭৮০ টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে আত্নসাৎ করেছেন। 

এ মামলার আসামিরা হলেন–গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূস, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম, পরিচালক ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক পারভীন মাহমুদ, নাজনীন সুলতানা, মো. শাহজাহান, নূরজাহান বেগম ও পরিচালক এস এম হাজ্জাতুল ইসলাম লতিফী।

এ ছাড়া অ্যাডভোকেট মো. ইউসুফ আলী, অ্যাডভোকেট জাফরুল হাসান শরীফ, গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসান ও প্রতিনিধি মো. মাইনুল ইসলাম, দপ্তর সম্পাদক কামরুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে।