গ্রামে লোডশেডিং কমিয়ে রাজধানীর গুলশান-বারিধারা-বনানীর মতো এলাকাগুলোতে লোডশেডিং দিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীকেও তার নিজের এলাকায় লোডশেডিং দিতে বলেন তিনি।


বৃহস্পতিবার (০৯ মে) রাতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীকে বলছিলাম, এক হাজার বা দুই হাজার মেগাওয়াট যেদিন লোডশেডিং হবে, গ্রামে লোডশেডিং আর দেবেন না।


দেবেন গুলশান, বারিধারা, বনানীর মতো বড়লোকদের জায়গায়, যারা সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করে।
সরকারপ্রধান বলেন, (অভিজাত এলাকায়) বাড়িতে লিফট, বাড়িতে টেলিভিশন, বাড়িতে এয়ারকন্ডিশন; তাদের দুই ঘণ্টা করে (লোডশেডিং) দিলে আমার অনেক সাশ্রয় হয়।


কৃষকের অভাব হবে না। এখন থেকে সেটিই করব।
প্রতিমন্ত্রীকে বলছি, আপনি যেখানে থাকেন, সেখানে লোডশেডিং দেখতে চাই। সেখানে লোডশেডিং দিতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, হ্যাঁ লোডশেডিং। যে প্রচণ্ড গরম, লোডশেডিং হয়েছে। আমরা স্বীকার করি। কিন্তু কৃষক যেন সেচটা পায়- সেখানে কিন্তু ভর্তুকি দেয়া হয়। সেখানে কোনো অভাব হয়নি।

বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সরকার বিদ্যুৎকেন্দ্র বহুমুখী করেছে। সোলার প্যানেল হচ্ছে। বায়ুভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র শুরু করেছি। কয়লাভিত্তিক করছি। তেলভিত্তিক-গ্যাসভিত্তিক সবই করছি। মানুষকে বিদ্যুৎ দিতে চাই। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ আমরা দিয়েছি।

বাংলাদেশে রাস্তা নির্মাণে খরচ বেশি বলে যারা সমালোচনা করেন, তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ কেউ প্রশ্ন তোলেন, বাংলাদেশে রাস্তা বানাতে এত খরচ কেন? এদের দেশের মাটি সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। মাটির সঙ্গে এদের কোনো সম্পর্কই নেই। আমাদের ব-দ্বীপ, এ মাটি নরম। এখানে কোনো কিছু করতে গেলে... ওই যেনতেন করতে করতে গেলে দু-চারদিনের বেশি থাকে না।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, আমরা আধুনিক প্রযুক্তিতে রাস্তা তৈরি করছি। রাস্তায়, যখন চড়েন দেখেন না? খরচ তো লাগবে। যেখানে শক্ত মাটি, সেখানে অত খরচ হয় না। নরম মাটি বলেই খরচ বেশি। এটি স্বাভাবিক। এ নিয়ে প্রশ্ন তোলার কিছু নেই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ কেউ মেট্রোরেল নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। এর কী প্রয়োজন ছিল? তিন হাজার কোটি টাকা দিয়ে তো যানজটমুক্ত হতো। আজ প্রতি ঘণ্টায় ৬০ হাজার মানুষ মেট্রোরেল দিয়ে চলতে পারে। যারা চড়ছেন, তারা সুফল পাচ্ছেন। যারা এটা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন, তারা লজ্জা পাচ্ছেন কি না, জানি না।

বর্তমান সরকারের সঙ্গে অন্যান্য সরকারের উন্নয়নচিত্রের তুলনা করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ১৫ বছরে যে পরিমাণ কাজ করতে পেরেছি; ওই ২১ বছর আর ৮ বছর; ২৯ বছরে কেউ করতে পেরেছে? পারেনি। পারবেও না। প্রকল্প দিয়েই তো আগে টাকা খাওয়া। আর আমরা প্রজেক্ট শেষ করে ছাড়ি। টাকা খাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

সরকারের সমালোচকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, মানুষের কল্যাণে কী করণীয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা কাজ করি। দেশের কল্যাণে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ভোগ করবেন সবাই, আর কথায় কথায় ব্যঙ্গ করবেন, আর প্রশ্ন তুলবেন। প্রশ্ন তোলার আগে- নিজেরা কী করেছেন, কোন দল করেন- সেই দলের বৃত্তান্ত থেকে শুরু করে অপকর্মগুলো একটি চিন্তা করে নেবেন।

প্রধানমন্ত্রীর আগে বক্তব্য দেন দ্বাদশ সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। সংসদ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।