চট্টগ্রাম লায়ন্স আই হসপিটালে চক্ষু বিষয়ক উচ্চতর শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের অনুমোদন লাভ করেছে । আগামী ২০২৩ সালের শুরু থেকে চট্টগ্রাম লায়ন্স আই ইনস্টিটিউট এন্ড হসপিটালে এমএলওপি এবং পোস্ট গ্র্যাজুয়েট সাবস্পেশালিটি ফেলোশীপ কোর্স চালু করা হবে। এছাড়া জুলাই থেকে ডিপ্লোমা ইন অফথালমোলজি কোর্স পরিচালনায় প্রস্তুতিও চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম লায়ন্স ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক চট্টগ্রাম জেলা গভর্নর লায়ন নাসিরউদ্দিন চৌধুরী।

গতকাল দুপুরে নগরীর জাকির হোসেন রোডের লায়ন্স হসপিটালের সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা জানান। চক্ষু বিষয়ক উচ্চতর শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য চট্টগ্রাম লায়ন্স আই ইনস্টিটিউট এন্ড হসপিটাল স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের অনুমোদন লাভ করায় সংবাদ সম্মেলনটির আয়োজন করা হয়।

তিনি আরো বলেন, বৃহত্তর চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে আই ক্যাম্প (চক্ষু শিবির), স্কুল সাইট স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম ও পারিবারিক স্বাস্থ্য পুষ্টি এবং শিক্ষা প্রকল্প সিটি সেন্টারে আধুনিক মানের হাসপাতাল-এই সমন্বিত কার্যক্রমের মাধ্যমে চট্টগ্রাম লায়ন্স ফাউন্ডেশন সেই ১৯৬৩ সাল থেকে সমগ্র চট্টগ্রাম বিভাগে অন্ধত্ব বিমোচন, দূরীকরণ ও চক্ষুরোগের চিকিৎসা পরিচালনা করে আসছে। সেবামূলক কার্যক্রমকে আরো আধুনিক, উন্নত ও প্রসারিত করতে ২০১৭ সালে লায়ন্স ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ এই হাসপাতালকে একটি রিজিওনাল সেন্টার অব এক্সেলেন্স মানে উত্তীর্ণ করার সিদ্ধান্ত নেন এবং সে অনুযায়ী অবকাঠাগোগত উন্নয়ন করা হয়। যন্ত্রপাতি ও দক্ষ জনবল সমৃদ্ধ করে সাবস্পেশালিটি সেবা কার্যক্রম চালু করা হয়। মিডলেবেল, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ও  সবস্পেশালিটিসহ বিভিন্ন কোর্স চালু করতে ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়।
নাসিরউদ্দিন চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম লায়ন্স ফাউন্ডেশনের এই অগ্রযাত্রায় এই সরকারি অনুমোদন অর্জন একটি বিশাল মাইলফলক, কারণ এর মাধ্যমে এই ইনস্টিটিউট এখন থেকে চক্ষু বিষয়ক উন্নত প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে। এই এলাকায় বিশ্বমানের আধুনিক চক্ষু সেবা প্রদানে, অন্ধত্ব বিমোচন ও দূরীকরণের কার্যক্রম এবং সাশ্রয়ীমূল্যে মানুষের দোড়গোড়ায় চক্ষুসেবা পৌঁছে দেয়ার যে লক্ষ্য আমরা কাজ করছি, এই অর্জন সেই প্রচেষ্টাকে আরো অনেক দূর এগিয়ে নিবে। আরেকটি বিষয় হলো-চক্ষুসেবা কার্যক্রমে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, নার্স ও প্যারামেডিকসহ সব ধরণের কার্যক্রমে নারীরাই সর্বত্র এগিয়ে। এক্ষেত্রে বৃহত্তর চট্টগ্রামে একটা প্রতিবন্ধকতা রয়ে গেছে। এই ইনস্টিটিউটের সূচনা সেটা কাটিয়ে উঠতে অনেকটাই সহায়তা করবে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে লায়ন নাসিরউদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমাদের এই হসপিটাল থেকে অসংখ্য গরীব রোগী সেবা নিয়েছেন। এখনো আপনারা যদি প্রয়োজন মনে করেন, কোনো গরীব রোগী টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না, আপনারা আমাদের কাছে পাঠিয়ে দিবেন। এখন চিকিৎসক তৈরির জন্য আমরা আই ইনস্টিটিউট করেছি। এখানে আমরা চাইলেও বাণিজ্য করতে পারবো না।  আমাদের কোর্সগুলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমই¦উ) অধীনে পরিচালিত হবে। ওনারা আমাদেরকে যতজন ছাত্র ছাত্রী ভর্তি করতে বলবে, আমরা ঠিক ততজনই ভর্তি করতে পারবো।

চট্টগ্রাম লায়ন্স আই হসপিটালের একাডেমিক ডিরেক্টর লায়ন অধ্যাপক ডা. প্রকাশ কুমার চৌধুরী বলেন, লায়ন্স আই ইনস্টিটিউট থেকে দক্ষ চিকিৎসক তৈরি হবে। এখানে এমএলওপি কোর্স থাকবে। এছাড়া ডিও, এমএস, বি-অপটম, ফেলোশীপ ট্রেনিং ও ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাকাল্টি সার্জিক্যাল ট্রেনিং থাকবে। আমাদের হসপিটালে রয়েছে বিশ্বের সেরা ফ্যাকো মেশিন। এছাড়া অন্যান্য আধুনিক যন্ত্রপাতি তো রয়েছে। এখানে অনেক বড় বড় অপারেশন হচ্ছে। লায়ন্স হসপিটাল শুধু গরীবদের জন্য নয়, এখানে ধনীরা আসতে পারেন। সবার জন্য রয়েছে একই রকম সেবা। এছাড়া আমরা বেসরকারি মেডিকেল কলেজ মেরিন সিটির সাথে একটি সমঝোতা চুক্তি করেছি। যেটার মাধ্যমে ওখানকার ছাত্র ছাত্রীরা আমাদের অপারেশন থিয়েটারে এসে প্রশিক্ষণ নিতে পারছেন।

চট্টগ্রাম লায়ন্স ফাউন্ডেশনের এসোসিয়েট সেক্রেটারি লায়ন এসএম আশরাফুল আলম আরজুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত দৈনিক আজাদী সম্পাদক ও সাবেক চট্টগ্রাম জেলা লায়ন গভর্নর এম এ মালেক। সাবেক চট্টগ্রাম জেলা লায়ন গভর্নর ও চট্টগ্রাম লায়ন্স ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান লায়ন কামরুন মালেক, লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল জেলা ৩১৫বি৪ এর দ্বিতীয় ভাইস জেলা গভর্নর লায়ন কহিনুর কামাল, চট্টগ্রাম লায়ন্স ফাউন্ডেশনের সাবেক চেয়ারম্যান লায়ন নাজমুল হক চৌধুরী, লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল জেলা ৩১৫বি৪ সাবেক গভর্নর লায়ন মো. মোস্তাক হোসাইন, সাবেক গভর্নর লায়ন সিরাজুল হক আনসারি, চট্টগ্রাম লায়ন্স ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি লায়ন ডা. দেবাশীষ দত্ত, ট্রেজারার লায়ন এস জোহা চৌধুরী।