চট্রগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকাটি হারিয়ে ফেলছে তার আবাসিক সৌন্দর্য । সরেজমিনে দেখা যায়, এই আবাসিকের প্রতিটি বাড়িই পরিণত হচ্ছে একেকটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে। প্রতিদিনই একটা না একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। ভবনের নিচতলার পার্কিংয়ের জায়গাও যেন এ থেকে বাদ যাচ্ছেনা।

আবাসিকে কোন বানিজ্যিক স্থাপনা না করার বিধান থাকলেও এই এলাকায় গড়ে উঠছে অসংখ্য প্রাইভেট ক্লিনিক, হসপিটাল,  অর্ধশত ডায়গনস্টিক সেন্টার, কমিউনিটি সেন্টার, ব্যাংক, স্কুল, মুদিমনিহারি দোকান, লন্ড্রি, সেলুন, রেস্তোরাঁ, এটিএম বুথসহ নানা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। এতে আবাসিকের বসবাসরত মানুষেরা পড়েছেন বিপাকে। কারন পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকা হলেও এখানে সারাক্ষণ ভীড় করে পুরো জেলা থেকে আগত রোগী ও বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ। আবসিক ফ্ল্যাটে বসবাসরত পরিবারের বাসিন্দারা জানান তাদের নিরাপত্তাহীনতার কথা।

গত ২০১৫ সালের ৮ জুনের মন্ত্রিসভার নির্দেশনা অনুযায়ী, আবাসিক এলাকায় কোন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থাকতে পারবে না। অথচ সে আইনের কোনরকম তোয়াক্কা না করে প্রতিনিয়তই বেড়ে চলেছে পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসার মালিক প্রশ্ন করে বলেন, একটি আবাসিক এলাকায় একের পর এক প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স পায় কি করে, সিডিএ তাদেরকে অনুমোদন দেয় কি করে, গণপূর্ত এই আবাসিকে তাদের অবস্থানকে কিভাবে মেনে নিচ্ছে, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র আছে কিনা? নাকি তারা মালিক থেকে  কৌশলে ভাড়া নিয়ে অবৈধভাবে এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছে। এলাকাটি এখন নিরাপত্তা হুমকির দিকে যাচ্ছে। এই এলাকার শিশুদের জীবনমান সংকীর্ন হয়ে উঠছে। তারা খেলতে পারছেনা। প্রাণভরে হাটতে পারছেনা।

 

পাঁচলাইশ আবাসিক কল্যান সমিতির মতে, এই এলাকার অধিকাংশ বাণিজ্যিক কার্যক্রম চলছে অবৈধভাবে। এ ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর গাফিলতি রয়েছে। এখানে বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান না হওয়ার জন্য বার বার সতর্ক করা হলেও কেউ যেন শুনছেনা তাদের কথা।

২০১৩-২০১৫ সালের শেষের দিকে নগরীর পাঁচলাইশ, কাতালগঞ্জসহ কয়েকটি আবাসিক এলাকায়  বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট, গুদাম ও হাসপাতালের যন্ত্র থেকে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর আবাসিক এলাকা থেকে বাণিজ্যক প্রতিষ্ঠান সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নেয় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)।


একাধিক নোটিশ পেয়েও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান সরিয়ে না নেয়ায় ২০১৫ সালের শেষের দিকে কয়েকটি আবাসিক এলাকায় অভিযানও চালায় সিডিএ। কিন্তু কোনো এক রহস্যজনক কারণে ২০১৬ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত কোনো অভিযান চালায়নি সিডিএ।

এটা ঠিক যে, আবাসিক এলাকায় কিছু বাণিজ্যিক চাহিদাও থাকে। এজন্য পরিকল্পনার সময় আবাসিক, বাণিজ্যিক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইত্যাদি জোন আলাদা করা হয়, যাতে অন্য কোনো কিছু আবাসিক এলাকার বৈশিষ্ট্য নষ্ট না করে। কিন্তু নগরের পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকায় নির্বিচারে বাণিজ্যিক স্থাপনা গড়ে উঠে।

 

 পাঁচলাইশ আবাসিকের আরেক বাসিন্দা আলি হোসেন বলেন, আবাসিক এলাকার পরিবেশ সাধারণত অনেকটা নিরিবিলি ও নিরাপদ থাকে। সিডিএ এখানে সবকিছু প্রয়োজন অনুযায়ী অনুমোদন দিয়ে থাকে। যেমন-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কয়টি থাকবে, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান কয়টি এবং কী কী তা নির্ধারিত থাকবে। অনুমোদনের বাইরে গিয়ে নতুন কোন বাণিজ্যিক বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার সুযোগ নেই। তিনি আরো বলেন, আমরা দেখছি আবাসিক এলাকায় অনুমোদনের বাইরে অনেকে বাণিজ্যিক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। এসবের ফলে যাতায়াত ব্যবস্থা ও শিশু-কিশোরদের খেলাধুলায় বিঘ্ন ঘটছে। এছাড়াও, অপরিকল্পিতভাবে আবাসিকে বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে উঠায় আবাসিকের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।


পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকার কল্যান সমিতির পক্ষ থেকে পুরো এলাকাজুড়ে বানিজ্যিক স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠান না করার জন্য ব্যানার টাঙ্গিয়ে সতর্কবার্তা দিলেও মানছেনা এই সতর্কবার্তা। জানা যায়, খুব শীঘ্রই এপিকের নতুন একটা হসপিটাল ও মেডিকেয়ার হাসপাতাল সেন্টার উদ্ভোধন হবে। এ নিয়ে এলাকার জনমনে চলছে চরম উত্তেজনা।

এই বিষয়ে সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন সামশ বলেন, এই এলাকাটিতো আবাসিক এলাকা হিসাবে অনুমোদন পেয়েছে। সেখানে যদি বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে তাহলে সেখানকার সমিতি ব্যবস্থা নিবে। আমাদের কাছেও অভিযোগ দিবে। আমরাতো তাদের থেকে কোন অভিযোগ পাচ্ছিনা। অভিযোগ না পেলে ব্যবস্থা কিভাবে নিবো।