চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেছেন, সকল নাগরিকের আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করণের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার সর্বজনীন পেনশন স্কিম ব্যবস্থা চালু করেছে। এটি বাস্তবায়নে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এখন পর্যন্ত এ জেলায় সাড়ে ৯ হাজার ব্যক্তি পেনশন স্কিমের আওতায় এসেছে। এটি প্রত্যেক নাগরিকের সুরক্ষা নিশ্চিত করবে। আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে গড়ে উঠার জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কিমের কোন বিকল্প নেই। অর্থনৈতিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ১৮-৫০ বছর বয়সী সকল বাংলাদেশী নাগরিক এই পেনশন স্কিমে অংশ নিতে পারবে। তবে বিশেষ বিবেচনায় পঞ্চাশোর্ধ নাগরিকগণ ১০ বছর নিরবচ্ছিন্ন জমা প্রদান করলে পেনশন সুবিধা পাবেন। সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের সুরক্ষায় এই সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু হয়েছে। স্কিমগুলোর গ্যারান্টি সরকার নিজেই। সরকার পরিবর্তনের ক্ষেত্রে কোন ধরণের প্রভার পড়বে না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু  শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা  মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আগামী ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সবাইকে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় আসতে হবে। আজ ২৪ এপ্রিল সোমবার সকাল ১১টায় নগরীর আগ্রাবাদস্থ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু হলে আয়োজিত ‘ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে সর্বজনীন পেনশন স্কিম ঃ সচেতনতা ও স্পর্ট রেজিস্ট্রেশন’ বিষয়ক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। দি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি সভার আয়োজন করেন। 

ডিসি বলেন, বাংলাদেশে সর্বজনীন পেনশন স্কিম একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এটি একটি রাষ্ট্রীয় কর্মসূচী। সর্বজনীন পেনশনের আওতায় আপাতত চার ধরণের স্কিম চালুৃ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রবাসীদের জন্য  প্রবাস স্কিম, বেসরকারী চাকুরীজীবিদের জন্য প্রগতি স্কিম, অনানুষ্ঠানিক খাত অর্থ্যাৎ স্বকর্মে নিয়োজিত নাগরিকদের জন্য সুরক্ষা স্কিম ও নি¤œ আয়ের মানুষের জন্য রয়েছে সমতা স্কিম। সরকার গত বছর  সর্বজনীন  পেনশন স্কিম চালু করার পর ব্যাপক সাড়া পড়লে একটি মহল এটি নিয়ে বিভিন্নভাবে অপপ্রচার চালাতে থাকে। পেনশন স্কিমের নামে না কি সরকার মানুষের পকেটের টাকা নিয়ে যাচ্ছে। পেনশন স্কিমের সুবিধা কি তা দেশের মানুষ এখন বুঝতে পারছে। প্রবাসীরা প্রবাস থেকে অনলাইনে পাসপোর্ট, ছবি, ব্যাংক একাউন্ট এবং তার নমিনির আইডি কার্ড ও ছবি দিয়ে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের সদস্য হওয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে পারবে। দেশে অবস্থানরত ১৮-৬০ বছর বয়সী বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নাগরিক তাদের আইডি কার্ড, ছবি, ব্যাংক একাউন্ট, নমিনির আইডি কার্ড ও ছবি দিয়ে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের সদস্য হতে পারবে। ৬০ বছর পূর্ণ হওয়ার গ্রাহক যত বছর বেঁচে থাকবেন তত বছর পেনশন পাবেন এবং ৬০ বছর পূর্ণ হওয়ার পর কোন ব্যক্তি মারা গেলে তার নমিনি ৭৫ বছর পর্যন্ত পেনশন পাবেন এবং ৬০ বছরের আগে মারা গেলে তার নমিনি মুনাফাসহ টাকাটা ফেরত পাবে। জমা টাকার মধ্যে ৫০ শতাংশ লোন পাবে। 

তিনি আরও বলেন, বিদেশে কর্মরতবা অবস্থানকারী যে কোন বাংলাদেশী নাগরিক তার অভিপ্রায় অনুযায়ী বৈদেশিক মুদ্রায় পরিশোধের শর্তে নির্ধারিত হারে চাঁদা প্রদান পূর্বক এই স্কিমে অংশগ্রহণ করলে দেশে প্রত্যাবর্তনের পর সমপরিমান অর্থ  দেশীয় মুদ্রায় পরিশোধ করাসহ প্রয়োজনে স্কিম পরিবর্তন করতে পারবেন। বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কোন কর্মচারী বা প্রতিষ্ঠানের মালিক নির্ধারিত চাঁদা প্রদান পূর্বক এই স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরতবা স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তি যেমন-কৃষক, রিক্সা চালক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতিসহ সকল অনানুষ্ঠানিক কর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিগণ নির্ধারিত হাওে চাঁদা প্রদান পূর্বক এই স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। পেনশনযোগ্য বয়সে উপনীত হলে চাঁদাদাতা আজীবন পেনশন ভোগ করবেন। দারিদ্র সীমার নি¤েœ বসবাসকারী  স্বল্প আয়ের ব্যক্তিগণ নির্ধারিত হারে চাঁদা প্রদান পূর্বক এই স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন এবংসমতা স্কিমে কর্তৃপক্ষ বিধি অনুসারে সমপরিমান অর্থ জমা করিবে। 

সভাপতির বক্তব্যে দি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র সভাপতি ওমর হাজ্জাজ বলেন, সর্বজনীন পেনশন স্কিমের সদস্য হলে ভবিস্যতে আর কারও উপর নির্ভরশীল হতে হবে না। যে দেশের সামাজিক নিরাপত্তা যতটা সুরক্ষিত সে দেশের মাপকাঠি ততটা উন্নত। মানুষ নিজের চেষ্টায় যেটা পারেনা, রাষ্ট্র যদি সে নিরাপত্তা দেয়  সেটাই সামাজিক সুরক্ষা। সরকারী দল বা যে রাজনৈতিক দলই থাকুক না কেন এ ধরণের কর্মসূচী রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণমুখী। তিনি ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দসহ প্রত্যেককে এ স্কিমের সদস্য হওয়ার আহবান জানান।  

দি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র সভাপতি ওমর হাজ্জাজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনসা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অতিরিকআত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোঃ সাদি-উর রহিম জাদিদ, চেম্বার পরিচালক মাহফুজুল হক, অহিদ সিরাজ চৌধুরী স্বপন, অঞ্জন শেখর দাশ ও আকতার পারভেজ। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা তাদের মতামত প্রদান করেন।