মুহাম্মদ সাজিদুল হক

তাপদহ একটি আবহাওয়া সংক্রান্ত শব্দগুচ্ছ যা দ্বারা বায়ুর অতিরিক্ত উষ্ণ অবস্থা নির্দেশ করা হয়। যদি কোনো স্থানে বাতাসের তাপমাত্রা দীর্ঘ সময় (৩ হতে ৫ দিন) অতি বৃদ্ধি পায় এবং সেই সাথে আর্দ্রতা বেড়ে যায় তবে তাকে তাপদহ বলা হয়।

চৈত্রের বিদায় লগ্নে তীব্র তাপদাহে পুড়ছে জনজীবন। ঘরে বাইরে কোথাও নেই শান্তি। বৃষ্টি নেমে তাপ কমাবে বলে মানুষ প্রত্যাশা করলেও আবহাওয়া বার্তায় আপাতত তেমন কোনো সুখবর নেই।

মাথার ওপর থেকে সূর্য যখন কিছুটা পশ্চিমাকাশে হেলে পড়ে। তখনই যেন প্রচণ্ড আঁচে গা পুড়ে যায় যায়। গরমের তীব্রতায় সবার হাঁসফাঁস অবস্থা। মানুষের পাশাপাশি পশু পাখিরও তীব্র তাপদাহে একি অবস্থা।
পোট্রের্ট ফটোগ্রাফি ম্যাগাজিনের কর্ণধার ফটো সাংবাদিক রূপম চক্রবর্তীর সোস্যাল মিডিয়ার টাইম লাইনে একটি ছবি দেখা যায় কবুতর পাইপ লাইনের মুখে পানি খুঁজতে ব্যস্ত। চট্রগ্রাম সহ বাংলাদেশে গত কয়েদিনের তীব্র তাপদাহে মানুষের পাশাপাশি পশু পাখিদেরও পানির খোঁজে রাস্তায় নেমে আসছে।

কয়েকদিন ধরে চলা এমন তীব্র খরতাপের কারণে মানুষের চলাচল করা কঠিন হয়েছে। ঘরের ভেতরে ফ্যান চললেও তাতে কাজ হচ্ছে না। বাইরে তীব্র গরমে মুহূর্তের মধ্যেই শরীর ঘামে ভিজে যাচ্ছে।

তীব্র গরম ও পানি পিপাসায় বিপর্যস্ত সারা দেশের মানুষ। গরম আরো বেড়ে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কোঠা পার হয়ে তীব্র হয়েছে তাপপ্রবাহ। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তীব্র তাপপ্রবাহে দিনের বেলায় এখন বাইরে চলাচলও কমে গেছে। প্রতিদিনই বিভিন্ন জেলায় উচ্চ তাপমাত্রার নতুন রেকর্ড হচ্ছে। আজ পয়লা বৈশাখ (শুক্রবার)
সারা দেশেই তাপমাত্রা বাড়বে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। বাতাসে আর্দ্রতা নেই বললেই চলে। কয়েক স্থানে উচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করেছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুসারে, কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সামনে আরো ৪ থেকে ৫ দিন বৃষ্টির ছোঁয়া মিলবে না। এপ্রিলের ৫ তারিখের পর থেকে একটানা আট দিন ধরে সারা দেশের কোথাও কোনো বৃষ্টি হয়নি আবহাওয়া অধিদপ্তরের রেকর্ড অনুযায়ী । দক্ষিণা বাতাস বন্ধ হয়ে গেছে বলে সাগর থেকে জলীয় বাষ্পপূর্ণ বাতাসও বন্ধ। ফলে কমে গেছে বাতাসের আর্দ্রতা। আবহাওয়া সূত্রে গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় ঢাকায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ২২ শতাংশ। রাজধানী ঢাকায় বসবাসকারী বন্ধু ডিজাইনার,উদ্যোক্তা ও সুরঞ্জনার কর্ণধার তৃপ্তির টাইম লাইনে খুঁজে পেয়েছি তাপদাহের অভিজ্ঞতা। যা হুবুহু তুলে ধরলাম-

"ঢাকার যানজট, ধুলো বালি, রাস্তার অবস্থা, আবহাওয়া সবকিছু নিয়ে আমরা অভ্যস্হ হবার ভান করছি,করে যাই সব সময়.....গরমের তীব্রতা বছর বছর বাড়ছে। মেলা বছর ঢাকায় থাকছি কিন্তু আজকে সিএনজি দিয়ে বাসায় ফেরার সময় আমার গরম লাগে নাই, আমার মনে হয়েছে দুই পাশ থেকে গালে গরম চুলার তাপ লাগছে, আগুনের কাছে মুখ থাকলে যেমন আগুনের গরমটা লাগে ও রকম আর এ অনুভূতি এই প্রথম! তীব্র তাপদহন  এর আগে ও অনেক দেখেছি, গরম লাগে, লাগছে এমন। কিন্তু আজকে জাস্ট মনে হলো আমার গালে আগুনের তাপ এসে লাগছে, আমি দুই পাশে দুটো চুলার মাঝে মুখ দিয়ে বসে আছি।বাসায় ফিরছি কিন্তু গাল এখনো জ্বলছে! ঢাকার রাস্তায় যাদের কাজ করতে হয় তাদের কথা ভাবছি...."

এন্টিক শৌখিন সংগ্রাহক তারিকুল ইসলাম জুয়েল ভাই তীব্র তাপদাহ নিয়ে উনার টাইম লাইনে মজার কিছু লেখা দেখতে পেয়েছি -
"আমি অবাক হয়ে যাই।
দেশে প্রচন্ড গরম পড়ায় কিছু কিছু মানুষ দোয়া চাইছ-
হে আল্লাহ, আরবের মত গরম দিছো,
এখন শেখদের মত টাকা আর বিবি দাও!
কেনো, আফ্রিকাতে গরম পড়ে না?
ঐ দেশগুলোতে টাকা পয়সা ওয়ালা মানুষ নাই ?
মেয়ে নাই ?
আপনারা আফ্রিকার মানুষের মত টাকা আর বিবি চাইতে পারেন না?
সমস্যা কই?
এতো রেসিজম ভাল না ।
তবে পীর বংশের মানুষ হিসেবে আরবটা আমি চাইতেই পারি। "

একুশে পত্রিকার সম্পাদক আজাদ তালুকদার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মুম্বাই থেকে তাঁর টাইম লাইনে পাওয়া লেখাটি পড়ার অনুরোধ করছি
"এই বিষাক্ততার কাছে সমর্পিত হতে ছুটছি দুয়ারে দুয়ারে..."

পুরান ঢাকায় বসবাসকারি বন্ধু মীর নাজমুল আহসান রবিন অতিষ্ট তাপদাহের মধ্যেও "বাংলা নর্ববষের শুভেচ্ছা" জানাতে ভুলেনি আমাদের কলেজ বন্ধুদের।  

প্রফেসর বন্ধু মোহাম্মদ ইমরানের টাইম লাইনে দেখতে পেয়েছি ফটিকছড়ি আব্দুল্লাহপুর থেকে -"গ্রীষ্মের তীব্র তাপদাহের মধ্যে গ্রামের বাড়িতে আসলাম৷ সবাইকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা.."

ইঞ্জিনিয়ার বন্ধু গোলাম হোসেন সোস্যাল মিডিয়ার টাইম লাইনে দেখতে পেয়েছি "এইবার ১৪৪৪ হিজরি রমজান মাস এবং ১৪৩০ বাংলার বৈশাখ এর প্রথম দিন কিন্তু শুক্রবার। ব্যাপারটা বেশ ভাল লাগল। আমরা মুসলিম এবং বাঙ্গালী, এই দুই বিষয় সত্য আমার জন্য। সবাইকে শুভ নববর্ষ। আগামি যেন সবার ভাল কাটে এই মোর দোয়া।"
চৈত্রের শেষ দিনে দুপুরের সময় জামালখান হয়ে জুবিলী রোড়ে নিজের কিছু কাজ করতে গিয়ে গরমে তীব্রতা অনুভব করতে পেরেছি। শ্রমজীবী খেটে খাওয়া অনেকের শরীরে ঘাম বেরিয়ে আসতে দেখা যায়। তাদের শরীর ভিজে একাকার হয়ে গেছে। হার্ডওয়্যার জিনিসপত্র কিনতে আসা এক ভদ্রলোক ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে মুখে দিচ্ছিলেন।পথচারী ভদ্রলোক বলতে শুনলাম রোজা থাকায় পানি পান করতে পারছি না। এদিকে গরমও সহ্য করতে পারছি না। উপায় না পেয়ে মুখে পানি দিয়ে কিছুটা হলেও শরীর শীতল করার প্রাণবন্ত চেষ্টা।
পাশেই রিকশা নিয়ে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করা লালমনিরহাটের চালক আব্দুস সালাম বলেন
"এই গরমে রিকশা চালাতে গিয়ে শরীর থেকে শুধু পানি ঝরছে। গলা শুকিয়ে আসছে। রিকশা চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত শান্তি নাই।’
আজ বৈশাখে প্রথম দিন শুক্রবার গ্রামের বাড়িতে নামাজ পড়তে গিয়ে একটা বিষয় খেয়াল করলাম অতিরিক্ত গরমের কারণে গাড়ির স্টেশনসহ হাটবাজারে রাস্তাঘাটে মানুষজন শূন্য হয়ে আছে। তীব্র গরমে ক্লান্তি উপেক্ষা করে বন্ধুত্বের টানে "বয়েজ অফ ৯৬" বন্ধুদের সাথে নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময় সহ ইফতার আড্ডা দারুণ উপভোগ্য ছিল বাংলা বর্ষের প্রথম দিনে।
এই শুভ মুহুর্তে দেশের বিরাজমান আবহাওয়া থেকে পরিত্রাণের জন্য প্রার্থনা সৃষ্টিকর্তার কাছে।

কিন্তু একটা জিনিস করতে পারি আমরা নিজেরা ভাল থাকার জন্য ।নিজের বিবেকটাকে বেশি কাজে লাগিয়ে বেশিবেশি গাছ লাগাতে পারি।সামনের দিনগুলোতে কি হতে যাচ্ছে আমাদের? আমরা  কি আঁচ করতে পাচ্ছি?পরিবেশের দিকে এইবার দৃষ্টি দেওয়া হোক। কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করছি আপনাদের সকলের এই ১৪৩০ বঙ্গাব্দ সুখ, সমৃদ্ধি, সুস্বাস্থ্য এবং সাফল্যে ভরপুর থাকুক।
শুভ নববর্ষ ।