চট্টগ্রাম নগরীর বাংলা বাজার ষ্ট্যান্ডরোডস্থ এপিসি রেলী ঘাটসহ ৯০ হাজার স্কোয়ার ফিট জায়গা সরকার হতে দেড় কোটি টাকা চুক্তিমূলে ভাড়া নেওয়া জায়গা অবৈধ দখলদারকে উচ্ছেদ করে ইজারাদারকে জায়গা বুঝিয়ে দেওয়ার দাবি।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে তৈয়ব শাহ এন্টারপ্রাইজ এর মালিক ভুক্তভোগী সাইফুল ইসলাম এই দাবি করেন।

 

তিনি লিখিত বক্তব্য জানান, বাংলা বাজার ষ্ট্যান্ডরোডে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অধীন এপিসি রেলী ঘাটসহ ২৭৫০ একর পরিত্যক্ত জায়গা ২০১৯ সালের ১ ডিসেম্বর পিএস শিপিংকে ৩ বছরের জন্য লিজ দেয় সরকার। তাদের মেয়াদ শেষ হয় ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর। এরপর প্রতিষ্ঠানটির সাথে পুনরায় চুক্তি নবায়ন না হওয়ায় বাংলাদেশ জুট করপোরেশন (বিজেসি) নতুনভাবে টেন্ডার আহ্বান করে। এতে আমার প্রতিষ্ঠান তৈয়ব শাহ এন্টারপ্রাইজ ১১৬ টাকা সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে জায়গার লিজ পায়। আমার প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ২০২৩ সালের ১ নভেম্বর আমি সাইফুল ইসলাম ইচ্ছাপত্র অনুসারে ১ কোটি ৩৮ লাখ ৫১০৮ টাকা পে-অর্ডারে বাংলাদেশ জুট করপোরেশনকে পরিশোধ করি। ইজারা পাওয়ার ৫ মাস অতিবাহিত হলেও আমরা ঘাটে ভিড়তে পারছিনা। পিএস শিপিং এর ব্যবস্থাপনা অংশীদার আশরাফুল আলম মাসুদসহ তার সাঙ্গপাঙ্গরা অবৈধভাবে পেশীশক্তি খাটিয়ে ঘাটটি দখল করে রেখেছেন। তারা আদালতকে হাতিয়ার বানিয়ে এবং সন্ত্রাসী দিয়ে আমার ইজারা পাওয়া জায়গাটি অবৈধভাবে দখলে রেখেছে। এতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি।

 

তিনি বলেন,গত ২৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ জুট কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) তসলিমা কানিজ নাহিদা স্বাক্ষরিত এক আদেশে বিজেসি মালিকানাধীন ২৭৫০ একর জায়গা অবৈধ দখলদার মেসার্স পিএস শিপিংয়ের ব্যবস্থাপনা অংশীদার আশরাফুল আলম মাসুদকে ৭ দিনের মধ্যে সংস্থাকে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য “উচ্ছেদ নোটিশ” দেয় । কিন্তু আশরাফুল আলম মাসুদগং সরকারি সম্পত্তিটি বিজেসি'র কাছে হস্তান্তর না করে সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে সিডিল রিভিশন ৬১৫৮/২৩ দায়ের করেন। ওই মামলায় বিচারপতি মোঃ জাকির হোসেনের একক বেঞ্চ ৪ মাসের স্থিতি অবস্থা আদেশ জারি করেন। ওই আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রীম কোর্টের চেম্বার জজ আদালতে বিজেসি পিটিশনার হয়ে সিভিল পিটিশন ফর লীভ টু আপীল নং ৩৭৯৫/২৩ দায়ের করেন। যা গত ১৭ ডিসেম্বর চেম্বার বিচারপতি এম.এনায়েতুর রহিমের আদালতে শুনানীকালে হাইকোর্টের ৪ মাসের স্ট্রে আদেশকে স্থগিত করা হয়।

এরপর গত ১৭ জানুয়ারি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সহকারি কমিশনার এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত দখল হয়ে যাওয়া বিজেসি’র সম্পত্তিগুলো উদ্ধারে অভিযানে যান। এসময় মেসার্স পিএস শিপিং এর অনুরোধে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত তাদের মালামাল সরিয়ে নিতে সময় বেধে দেন। সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ১২ ফেব্রুয়ারি আশরাফ উল আলম মাসুদ উচ্ছেদ অভিযান বন্ধে হাইকোর্টে রিট করে পিটিশন দায়ের করেন। ফলে দীর্ঘ সময় তারা জায়গাটি দখলে রাখে। সর্বশেষ ১১ মার্চ তাদের আবেদন সিভিল রিভিশন নং ৪১২ -এ হাইকোর্ট বিভাগ তর্কিত আদেশটি ৮ সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে। ফলে বাংলাদেশ জুট কর্পোরেশন কর্তৃক মেসার্স পিএস শিপিং-কে বিজিসি’র সম্পত্তি থেকে উচ্ছেদ করতে আর কোন বাধা নেই।

তবে প্রশাসন ১১ মার্চের পর থেকে কোন আইনী বাধা না থাকার পরও অদৃশ্য কারণে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেনি।

তিনি বলেন,বাংলাদেশ জুট করপোরেশনের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) তসলিমা কানিজ নাহিদা তাঁর অফিস আদেশে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক, পুলিশ কমিশনারসহ সংশ্লিষ্টদের জায়গাটি থেকে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করে বর্তমান ইজারাদার (অর্থাৎ আমাদেরকে) জায়গাটি বুঝিয়ে দিতে আইনী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন। কিন্তু উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনাকারী প্রশাসনের নানা অসহযোগিতার কারণে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ হচ্ছে না। এতে আমরা কোটি টাকা খরচ করে লিজ পাওয়া জায়গা ব্যবহার করতে পারছি না। সমস্ত নিয়ম মেনে আমার প্রতিষ্ঠান এপিসি রেলী ঘাট ইজারা নিই। তবে এ ঘাটের পূর্বের ইজারাদার পিএস শিপিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফুল আলম মাসুদ আমি ও আমার ভাই মাসুদুল ইসলাম, শাহিদুল ইসলাম ও মো. জাহিদুল ইসলামকে ইজারাকৃত জায়গায় যেতে বাঁধা দিয়ে আসছেন। আমাদেরকে সন্ত্রাসী দিয়ে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। সন্ত্রাসী ও অস্ত্রধারীদের দিয়ে মহড়া দিচ্ছে। আমরা লিজ পাওয়া জায়গায় গেলে জীবননাশের হুমকি দিচ্ছেন। ২৬ ডিসেম্বর প্রকাশ্যে তারা আমাদের হুমকি দেয়।

পরে ৩১ ডিসেম্বর জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ডবলমুরিং থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (নং-১৯৩৪) দায়ের করি। পুলিশ প্রশাসন সন্ত্রাসী ও ভূমিদস্যু চক্রটিকে সর্তক করে দিয়েছেন। তারপরও তাদের হুমকি ধমকি বন্ধ নেই। এখন আমি ও আমার ভাইয়েরা জীবন শঙ্কায় রয়েছি।

 

প্রশাসনের উচিত হাইকোর্টের আদেশ মেনে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করে আমাদের কাছে জায়গাটি হস্তান্তর করা। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী, পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

 

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মাসুদুল ইসলাম, শাহিদুল ইসলাম , মো. জাহিদুল ইসলাম , প্রতিষ্ঠানে ম্যানেজার ও প্রতিবেশী ।