তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের শেষ ঘণ্টাগুলো ক্রমশ উত্তাল হয়ে উঠেছে। গত ২০ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান তার মেয়াদ আরও পাঁচ বছর বাড়ানোর মরিয়া প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। ভোট পাওয়ার প্রচেষ্টায় কোনো কমতি রাখছেন না বিরোধী জোটের নেতা কামাল কিলিচদারোগ্লুও। আগামীকাল রোববার (২৮ মে) দেশটিতে দ্বিতীয় পর্বের ভোট অনুষ্ঠিত হবে। খবর বিবিসির।


জাতীয়তাবাদীদের ভোট টানতে তুরস্কে আশ্রয় নেওয়া লাখ লাখ সিরিয়ার শরণার্থীকে ফেরত পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কামাল কিলিচদারোগ্লু। তার এই বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেছেন প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে কিলিকদারোগ্লুর জয় হবে সন্ত্রাসীদের বিজয়।’


বিরোধী প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী প্রথম রাউন্ডে এরদোয়ান থেকে ২৫ লাখ ভোটে পিছিয়ে ছিলেন। তবে বর্তমান প্রেসিডেন্ট এগিয়ে থাকলেও তাদের মধ্যে ব্যবধান এখনও পূরণ করা সম্ভব হতে পারে। এর জন্য বিরোধী নেতার প্রথম দফায় তৃতীয় স্থানে থাকা অতি-জাতীয়তাবাদী প্রার্থীর সিনান ওগানের সমর্থন লাগবে, অন্যথায় প্রথম দফায় অংশ না নেওয়া প্রায় ৮০ লাখ ভোটারের সমর্থন পেতে হবে।

এই সপ্তাহে চার ঘণ্টা বাবালা টিভি নামে একটি ইউটিউব চ্যানেলে দর্শকদের প্রশ্ন নিয়েছিলেন কিলিচদারোগ্লু। দেশটিতে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন তরুণ মেহেটেপ। তিনি মধ্য-ডানপন্থী জাতীয়তাবাদী গুড পার্টির সদস্য। তিনি মনে করেন, ইউটিউবের এসব অনুষ্ঠান কাজে আসতে পারে। বাবালা টিভির এসব অনুষ্ঠান অনেক তরুণ ভোটারকে প্রভাবিত করেছে, যারা প্রথমবার ভোট দেননি।

আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ভোটারদের সত্যিকার অর্থে নিজেদের পছন্দ থাকতে পারে। কিন্তু তুরস্ক (সরকার) গণতান্ত্রিক নির্বাচন অনুষ্ঠানের মৌলিক নীতিমালা পূরণ করেনি।

প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান গত ছয় বছরে শুধু নিজের ক্ষমতা বাড়াননি, তিনি ভিন্নমত দমন করেছেন এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে কারাগারে পাঠিয়েছেন। কয়েক মাস ধরে তুরস্কের ধুঁকতে থাকা অর্থনীতি ছিল এক নম্বর ইস্যু, কিন্তু রোববারের দ্বিতীয় পর্বের ভোট ঘনিয়ে আসায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে বাগ্‌যুদ্ধ তীব্র হয়েছে এবং এর কেন্দ্রে রয়েছে শরণার্থীরা।

যদিও প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান সিনান ওগানের সমর্থন জিতেছেন, তবে বিরোধী নেতা কিলিচদারোগ্লু উমিত ওজদাগের অভিবাসীবিরোধী ভিক্টোরি পার্টির সমর্থন পেয়েছেন। ভিক্টোরি পার্টির নেতা এই সপ্তাহে বলেন, ‘কিলিচদারোগ্লু এক বছরের মধ্যে আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে এক কোটি ৩০ লাখ অভিবাসী ফেরত পাঠাতে সম্মত হয়েছেন।’

অধ্যাপক মুরাত এরদোয়ান সিরিয়ান ব্যারোমিটার নামে একটি নিয়মিত ফিল্ড স্টাডি পরিচালনা করেন। সিরিয়ার শরণার্থী এবং ইরান, ইরাক, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান থেকে আসা অনিয়মিত অভিবাসীর সংখ্যা ৬০ থেকে ৭০ লাখের কাছাকাছি।

অধ্যাপক মুরাত এরদোয়ান বলেন, ‘তাদের বক্তব্য বাস্তবসম্মত নয়, বাস্তবে এটা অসম্ভব। যদি আমরা স্বেচ্ছায় [প্রত্যাবাসনের] কথা বলি তবে তা সম্ভব নয়। আর যদি জোর করি, তাহলে প্রতিদিন ৫০ হাজারের বেশি ফেরত পাঠাতে হবে।’


শরনারথীদের নিয়ে এসব বক্তব্য অপ্রীতিকর, তবে এটি পার্থক্য গড়ে দিতে পারে। জনমত জরিপে দেখা গেছে, ৮৫ শতাংশ তুর্কি সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের উদ্বাস্তুদের দেশে ফিরাতে চায়।