সৈয়দ নুরুল ইসলাম :

'পরিবার সুশাসন প্রেক্ষিত সেই দিন আর এই দিন'....
বিষয়টা নিয়ে আজ একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ পড়ুয়া ছাত্র ছাত্রীদের নিয়ে আলোচনা।আমাকে প্রধান বক্তা হিসাবে এতগুলো ছাত্র ছাত্রীর সামনে এই জটিল বিষয়ে কথা বলতে হবে।
শুরু করলাম আমার ব্যক্তিগত জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে।নিন্ম মধ্যবিত্ত রক্ষণশীল পরিবারে আমার জন্ম ও বেড়ে উঠা। মা ছিলেন কঠিন এক ব্যক্তিত্ব।কঠোর শাসনের মধ্যে ১০ ছেলে মেয়েকে বড় করেছেন।আমি ছিলাম ১০ ছেলেমেয়ের মধ্যে পঞ্চম।স্কুল পালানো ছাত্র। পড়ালেখায় অমনোযোগী। একদিন স্কুল চুরি করে অন্য গ্রামে ফুটবল খেলতে গেলাম।বাড়ি ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গেল।মাতো আগুন।ঘাড় ধরে হাত পা বেধে নারিকেলের শলা দিয়ে জব্বর পিটুনি।কথা একটা, আর কোন দিন স্কুল ফাঁকি দেব কিনা।না মা দেবনা,দেবনা।তারপরও পিটানো শেষ হয়না।অনেকটা বেহুশ হয়ে যখন মাঠিতে শুয়ে পড়ি তখন মা ক্ষান্ত হন।সেই মার খেয়ে স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করেছি।কিন্তু একদিনের জন্যও   আর ক্লাস ফাঁকি দেইনি। মা আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে।শ'দুয়েক ছাত্র ছাত্রী আমার কথা শুনে মন্ত্রমুগ্ধের মত তাকিয়ে আছে।
একটু সময় নিয়ে জানতে চাইলাম, তোমাদের মধ্যে কি কেউ আছ আমার মত মায়ের হাতে মার খেয়ে এখানে এসেছ?একজনও পেলাম না।সবাই নিরব।
এবার বললাম, জীবনের আরেক গল্প।আমি এমন পরিবারও চিনি যেই পরিবারের ৬২ বছরের একজন প্রতিষ্ঠিত মানুষ তার বড় ভাইয়ের শাসনের বাহিরে এখনো যেতে পারেনি।ক'দিন আগেই আমার সামনে পারিবারিক  ব্যবসায়ীক বিষয়ে তর্ক করতে গিয়ে বড় ভাইয়ের হাতে থাপ্পড়  আর কান টানা খেয়ে মাথা নত করে নিরবে বাড়ি ছেড়ে রাতের বাসে তার কর্মস্থল ঢাকায় ফিরে  দু'দিন পর  বড় ভাইকে ফোন করে জানতে চাইলেন ওনার শরীর কেমন। আমার কথা শুনে ছাত্র ছাত্রীরা যেন আকাশ থেকে পড়ল।একটি মেয়ে দাড়িয়ে বলল, স্যার আপনি কি  কোন বানানো গল্প বললেন?আমি বললাম না।মোটেও না।মেয়েটা আমার ফোন নাম্বারটা  চেয়ে নিয়ে বলল, স্যার আমি কি একদিন আপনার সাথে কথা বলতে পারি?  জী পারেন।যেকোনো সময়।
সেই দিন আর এই দিন...
পরিবারগুলো যে কত বদলে গেছে।পারিবারিক অনুশাসন কত আগেই গত হয়ে গেছে....

লেখক: শিল্প-উদ্যোক্তা, সমাজকর্মী ও কলামিস্ট।