নেত্রকোনায় শতবর্ষী সরকারি খেলার মাঠে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ নিয়ে আলোচিত ও সাংবাদিককে মামলায় জড়ানোর হুমকিদাতা নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা বেগমকে একদিনের ব্যবধানে এবার চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে বদলি করা হয়েছে।


আজ  নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, গত বৃহস্পতিবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাঠ প্রশাসন-২ শাখার উপসচিব কে এম আল-আমীন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে মাহমুদা বেগমকে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে পদায়ন করা হয়েছে।

এর একদিন আগে গত বুধবার ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার মো. খবিরুল আহসান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে তাকে কেন্দুয়া উপজেলার পার্শ্ববর্তী মদন উপজেলায় বদলি করা হয়েছিল।

জেলার কেন্দুয়া উপজেলার বলাইশিমুল মাঠে ঘর নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ার মধ্যেই এলাকাবাসী সেটি রক্ষার দাবিতে আন্দোলনে নামে, যার অংশ হিসেবে গত ২৮ মে ওই মাঠে মানববন্ধন করেন তারা। পরের দিন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম, ইউএনও মাহমুদা বেগম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র আসাদুল হক ভূঁইয়া, ওসি আলী হোসেন মাঠে যান। তারা আন্দোলনকারী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসীর সঙ্গে মতবিনিময় করে মাঠের পূর্ব-উত্তর পাশে ঘর নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। ওইদিনই জায়গাটির মাপ দিয়ে ঘর নির্মাণের স্থান নির্ধারণ করেন তারা।

৩০ মে একদিকে ঘর নির্মাণের জন্য ইট, বালুসহ অন্যান্য নির্মাণসামগ্রী পাঠিয়ে কাজ শুরু করা হয়।

অপরদিকে, একইদিন মাঠ রক্ষার দাবি নিয়ে প্রশাসনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন আন্দোলনকারীরা।

আদালত মামলাটি খারিজ করে দিলে গ্রামবাসীদের একাংশ মাঠ রক্ষার দাবিতে আন্দোলন চালানোর ঘোষণা দেন। এরপর থেকে আন্দোলনকারীরা অন্তত পাঁচটি মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন। ঢাকার শাহবাগেও ওই মাঠ রক্ষার সমর্থনে মানববন্ধন হয়।

৩০ জুন রাত ৯টার দিকে ‘একদল দুর্বৃত্ত’ প্রকল্পে পাহারারত গ্রাম পুলিশকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে নির্মাণাধীন ঘর ভাঙচুর করে বলে অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় দ্রুত বিচার আইনে মামলা হয়। এর আড়াই মাসের মাথায় গত ১৩ আগস্ট ভোররাতে উপজেলার বলাইশিমুল গ্রামের শতবর্ষী সরকারি খেলার মাঠের কিছু অংশে নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের নির্মাণাধীন ঘরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে ওইদিন বিকেলে প্রেস ব্রিফিং করেন ইউএনও মাহমুদা। সেখানে ইউএনওর বক্তব্য ভিডিও ধারণ করেন দৈনিক সংবাদ ও ডেইলি অবজারভারের প্রতিনিধি এবং কেন্দুয়া প্রেসক্লাবের সদস্য হুমায়ূন কবীর। পরে তিনি সেই ভিডিও তার ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করলে সন্ধ্যায় ইউএনও তাঁকে ফোন করে হুমকি-ধামকি দেন।

বলাইশিমুল মাঠ রক্ষার দাবিতে আন্দোলনকারীরা নির্মাণকাজ বন্ধ করার জন্য নিম্নআদালতে গিয়ে ফিরে এলেও ১৪ অগাস্ট হাইকোর্ট তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে একটি আদেশ দেন। আদেশে নির্মাণকাজের ওপর তিন মাসের স্থগিতাদেশ দেওয়া হয় এবং আগামী ৬০ দিনের মধ্যে এই বিষয়ে আদালতে প্রতিবেদন জমা দিতে নেত্রকোনা জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেন আদালত।

একইসঙ্গে মাঠটির শ্রেণি পরিবর্তন কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং কেন বলাইশিমুল মাঠটিকে মাঠ হিসেবে সংরক্ষণ করতে নির্দেশ দেওয়া হবে না—জানতে চেয়ে রুলও জারি করেন আদালত।

তারপর ইউএনও মাহমুদা বেগম মাঠে নির্মাণকাজ বন্ধ রাখেন এবং আপিলের কথা জানান।

সেই সময় থেকেই বিভিন্ন মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলতে থাকে আলোচনা ও সমালোচনা।