"মাদক যেখানে, প্রতিরোধ সেখানে" প্রত্যয়ে গঠিত মাদক প্রতিরোধ কমিটি, ভাটবাউর, মানিকগঞ্জ এর উদ্যোগে ভাটবাউর গ্রামের প্রবেশমুখে মাদকের বিরুদ্ধে সচেতনতামূলক তোরণ উদ্বোধন, পোস্টার লাগানো ও লিফলেট বিতরণ করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে মানিকগঞ্জ জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো: হামিমুর রশীদ।

জানা যায়, ভাটবাউর গ্রামটি জেলা শহরের নিকটবর্তী হওয়ায় এবং মাদকের সহজলভ্যতা, অভিভাবকদের অসচেতনতা, ধর্মীয় শিক্ষার অভাব ও সহজেই টাকা উপার্জনের সুযোগসহ বিভিন্ন কারণে মাদকসেবী ও বিক্রেতার আধিক্য বৃদ্ধি পেয়েছে। সাথে চুরি ও ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধ বেড়ে গেছে। কতিপয় মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীর কারণে যুবসমাজের এমন অধঃপতন ঠেকাতে গ্রামের সচেতন লোকজন মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন।

এরই প্রেক্ষিতে গত ০৫ জুলাই ২০২৩ তারিখে ভাটবাউর যুবসংঘের উদ্যোগে একটি আলোচনা সভায় মাদকের বিস্তার ঠেকাতে উপপরিচালক মো: হামিমুর রশীদ সকলকে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি একটি কমিটি গঠনের পরামর্শ প্রদান করেন। পরবর্তীতে দীঘি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আখতার উদ্দিন আহমেদ (রাজা) ০৮ নং ইউপি সদস্য মাসুদ রানাকে সভাপতি, ০৭ নং ইউপি সদস্য আবু তাহের লিটনকে সিনিয়র সহ-সভাপতি, নারী সংগঠক ঝর্ণা আক্তারকে সহ-সভাপতি ও মো: সুমন মোল্লাকে সাধারণ সম্পাদক করে একটি কমিটি গঠন করেন।

কমিটি গঠনের পর সদস্যরা এলাকার চিহ্নিত মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার পরামর্শ দেন এবং তাদের অভিভাবকদের এ বিষয়ে সচেতন করেন। তবে দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসায়ের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা এত সহজেই সুপথে ফিরে আসতে চায়নি। প্রাথমিকভাবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর
মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করলে গ্রামের বেশিরভাগ মাদক ব্যবসায়ী এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে মো: রাসেল মিয়া ও সাদিকুল ইসলাম রাব্বিসহ অনেকেই "ভবিষ্যতে মাদক সেবন ও বিক্রি করবেনা" মর্মে স্ট্যাম্পে মুচলেকা প্রদান করে গ্রামে ফিরে আসলেও তারা পুনরায় মাদক বিক্রি শুরু করে। প্রকাশ্যে মাদকসেবন ও বিক্রি হচ্ছে এমন তথ্য দেয়ার পর মানিকগঞ্জ জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো: হামিমুর রহমান আরো কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানে মাদক ব্যবসায়ী মোঃ রাসেল মিয়াকে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে এক বছরের কারাদণ্ড প্রদান করে। আটককৃত মঙ্গল মিয়ার পুত্র লিমন বর্তমানে জামিনে মুক্ত রয়েছে। স্থানীয় লেবুর পুত্র লিমন পলাতক, এবং মাসুম ও শাহিনকে তাদের অভিভাবকরা শাসন করেছেন। এছাড়া, জনৈক ভাড়াটিয়া মাদক জড়িত থাকার বিষয়টি ধরা পড়ার পর তিনি সপরিবারে এলাকা ত্যাগ করেছে। যারা মাদক ব্যবসায়ে জড়িত ছিলো তাদের অনেকে জেলখানা ও আত্মগোপনে থাকায় বর্তমানে ভাটবাউর গ্রামটি অনেকটা মাদকমুক্ত হয়ে এলাকায় স্বস্তি ফিরে এসেছে।

উপপরিচালক মো: হামিমুর রশীদ প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, আমরা মাদক নির্মূলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকি। অভিভাবকরা সচেতন হলে মাদকের কালো হাত থেকে সন্তানকে রক্ষা করা সম্ভব। তিনি মাদক প্রতিরোধ কমিটির কর্মকান্ডের প্রশংসা করেন এবং তাদের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেন। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি আব্দুস সামাদ মাস্টার বলেন, আগে মাদকসেবীরা এতটাই বেসামাল ছিলো যে, রাস্তাঘাটে চলাচলের সময় সম্মান রক্ষার্থে মাথা নিচু করে যাতায়াত করতাম। মাদক প্রতিরোধ কমিটির সক্রিয় ভূমিকায় এলাকা এখন মাদকের থাবা থেকে অনেকটা মুক্ত হয়েছে। এ বিষয়ে মাদক প্রতিরোধ কমিটির সহ-সভাপতি ঝর্ণা আক্তার বলেন, মাদক ব্যবসায়ীরা সমাজের শত্রু, আমরা মাদক যেখানে সেখানেই প্রতিরোধ গড়ে তুলবো।

সমাজসেবক আমজাদ হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মাদক প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ০৮ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মাসুদ রানার সভাপতিত্বে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সহ-সভাপতি ০৭ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মাসুদ আবু তাহের লিটন, সহ-সভাপতি ঝর্ণা আক্তার, সাধারণ সম্পাদক মো: সুমন মোল্লা, আব্দুস সামাদ মাস্টার, জহির মেম্বার, চ্যানেল ৭১ এর সাংবাদিক মনিরুল ইসলাম মিহির প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে সুশীল সমাজ ও ভুক্তভোগী অভিভাবকগণ এখন অনেক সচেতন হয়েছেন। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা আমাদের চারপাশ মাদক মুক্ত রাখবো। আশা করি মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে। পরিশেষে তারা ভাটবাউর গ্রামে প্রবেশেমুখ টিকাদারবাড়ির সামনে ও মূলজান মোড়ে সচেতনতামূলক স্লোগান সম্বলিত স্থাপনকৃত তোরণ উদ্বোধন, গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে পোস্টার লাগানো ও লিফলেট বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।